পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবষান ১৩ যতীন অবাকৃ দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে রইল। প্রথমেই যে কথাট। ওর মনে উঠলে সেটা এই যে, পুষ্পের সঙ্গে শেষবার দেখা হওয়ার পরে যে বহু বছর কেটে গিয়েচে–তেরো বছর পরে সে বিয়ে করে আশাকে, বিয়ে করেচেও আজ দশ বছর—এই দীর্ঘ, দীর্ঘ তেইশ বছর পরে কেওটার বুড়ো,শবতলার ঘাটের সেই রূপসী মেয়ে বালিকা পুষ্প কোথা থেকে এল ? যে বয়সে তারা দুজনে— নৈহাটির ঘাটে to: বসে পৈঠার পাটে খেলা করেছিল ফুল ভাসায়ে জলে বুড়োশিবতলার ঘাটের প্রাচীন সোপানশ্রেণীর ওপরে বাকাভাবে অস্তসূর্যের আলো এসে পড়েচে–ঘাটের রানায় শেওলা জমেচে, ঠিক ওপারে হালিসহরে খামামুন্দরী ঘাটের মন্দিরেও পড়েচে রাঙা আলো, কিন্তু সেটা পড়েচে পশ্চিমদিক থেকে সোজাভাবে গিয়ে, এখনও সেই প্রাচীন পাখীর দল ডাকসে বড় অশ্বখগাছটার ডালে ডালে, সাদা পাল তুলে ইলিশ মাছ ধরা পুরোনো জেলেডিঙির সারি চলেছে ত্রিবেণীর দিকে.যতীন বসে পুষ্পের সঙ্গে গত বারোয়ারীতে যাত্রায় দেখা কি একটা পালার গল্প করচে তেইশ বছর পরেও পুপ এখনও সেই রকমটি দেখতে রয়েচে কেমন করে? কিন্তু পরক্ষণেই তার মনে হোল—পুষ্প তো নেই! সে তো বহুকাল মরে গিয়েচে । ব্যাপার কি, সে স্বপ্ন দেখচে না কি ? পুষ্প কিন্তু এগিয়ে এসে হাসিমুখে বল্লে—অবাক হয়ে চেয়ে দেখচো কি ? চিনতে পেরেচ ? বল তো আমি কে ? যতীন তখনও ই করে চেয়েই আছে "বল্পৈ-খুব চিনেচি। কিন্তু তুই কোথা থেকে এলি পুষ্প ? তুই তো কত কাল হোল— পুষ্প খিল খিল করে হেসে উঠে বল্লে—মরে গিয়েচি, অর্থাৎ তোমার হাড় জুড়িয়েছিল— এই তো ? কিন্তু তুমিও যে মরে গিয়েচ যতুদা ? নইলে তোমার আমার দেখা হবে কেমন করে ? তুমিও পৃথিবীর মায়া কাটিয়েচ অর্থাৎ পটল তুলেচ । যতীনের হঠাৎ বড় ভয় হোল । এ সব কি ব্যাপার । তার জর হয়েছিল খুব, সে কথা মনে আছে। তারপর মধ্যে কি হয়েছিল তার জানা নেই। বর্তমানে বোধ হয় তার জরের ঘোর খুব বেড়েচে, জরের ঘোরে আবোল-তাবোল স্বপ্ন দেখছে। তবুও সে এতকাল পরে পুষ্পকে দেখতে পেয়ে ভারি খুশি হোল । স্বপ্নই বটে, বড় মধুর স্বপ্ন কিন্তু ! পুষ্প কিন্তু ওকে ভাববার অবকাশ দিলে না । বল্পে-পুরোনো দিনের মত দুষ্টুমি কোরে না ঘতুদা। এখন তুমি ছেলেমান্থটি নেই। এখানে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসচে, থাকতে পারচি না—এখন এসো আমার সঙ্গে । সে হঠাৎ পাগল হয়ে গেল নাকি ? সে তো কিছুই বুঝতে পারচে না । যাবে কোথায় চলে সে ? পুপই বা আসে কোথা থেকে ? অথচ সে-তে এই তার পুরোনো ঘরেই রয়েচে, ঐ তো