পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৪৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Տ8 বিভূতি-রচনাবলী তাদের তালের ডোঙা পাওয়া গেল । হাতে হকো, সত্তর বছরের ওপর বয়েস। তাকে ডেকে বললে—ও মালতে ভাই ডোঙাট নেবো ? —কনে যাবা ? — যাবে যাত্রা শুনতি রামনগরের বাজারে । —মাছ ধরব না এ বছর বিলি ? বডড মাছ উঠচে । —দ্যাখলাম । তা খাজনা বডড বেশি করেচে এ বছর জমিদার-চোদ্দ ট্যাক দিয়ে নাকি লাইকিনি করতে হবে । মোরা গরিব লোক, অত ট্যাক কনে । —ধরো না মাছ । আমি আছি, কেউ কিছু বলবে না । নাজির মালতে এ অঞ্চলের মধ্যে অবস্থাপন্ন ধনী গৃহস্থ –চল্লিশ-পঞ্চাশটা ধানের গোলা বাড়ীতে। ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের চুল কেটে নিলে কি পরঘাট করলে মালতে বাড়ী জানান দিতে আসে দূর দূরান্তর থেকে—ত থেকেও বেশ দু-পয়সা উপার্জন হয় ওদের। লোকও খুব ভালো। অনেক নিরন্ন দরিত্র পরিবার গত পঞ্চাশের মন্বন্তরে ওদের গোলার ধান নিয়ে fitL5 | মালতে বললে—তামাক খাবা না রামধন ? —না মালতে ভাই, সময় হবে না। এখুনি পার না হলি জায়গা করতি পারবো না । ওরা শক্ত হাতে ডোঙা চালিয়ে বিলের মাঝখানের কষাড় দ্বীপে এবং তারপর সেখান থেকে সবুজ উলুঘাস ভর ওপারে চলে গিয়ে একটা হিজল গাছের গায়ে ডোঙার দড়ি বেঁধে মাঠের পথ বেয়ে হেঁটে চললো—আমিনপুরের দিকে। আমিনপুরের হরিহর সর্দার জাতে বুনো, রাস্তার ধারে বসে আউশের ক্ষেতে চৌকি দিচ্চে, ওদের দেখে বললে—ধাত্রা শুনতি ? —রামধন বললে—তামাক আছে ? 戰 —বোসে । খাওয়াই । --যাত্রা শুনতি যাব না ? --কি করে যাই ? গরুর এখনো ম্যাল মাঠ। যদি ছেড়ে যাই, সব বেটাদের গরুতি শেষ করে দেবে। একে তো এবার ধানই হবে না দেশে, তার ওপরে ম্যাল মাঠ করে বসেচে এই ছেরাবন মাসেও। ভাবে দিকি । তামাক খেয়ে আবার ওরা রওনা হোল । ক্রোশখানেক গিয়ে ছোট্ট নদী কোদলা । ওপারে কাজি সাহেবদের বাড়ী । কাজি সাহেবদের নিজের খেয়া, বিনি পয়সায় পারাপার করে । রামধন ডাক দিতে ওদের লোক নৌকো নিয়ে এসে পার করে দিয়ে গেল । বেলা একেবারে যায় । পশ্চিম দিকে মস্ত কালে মেঘ উঠচে । ফণি দেখেই বললে—বাবা, হেঁড়ে চোমরা মেঘ ! বিষ্টি হবে ।