পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৪৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কুশল পাহাড়ী {}\\$ —ভগবান, আপনাকে ভালবাসি । আপনার কৰ্ম্মে আমার আনন্দ । কষ্ট হবে কেন ? রাজকুমার নন্দ আরও কিছুক্ষণ পূজনীয় জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার সঙ্গে কথাবার্তা বললেন। বিহারের এদিকে-ওদিকে গেলেন । এদিকে মন ছটফট করছিল, বেশিক্ষণ আর থাকা চলে না। চক্ষুলজ্জার খাতিরে আরও অদ্ধদও এদিক-ওদিক করতে হল। তারপর ভগবান জিনের পাদবন্দন ও প্রদক্ষিণ ক’রে বিদায় প্রার্থনা করলেন । হায়, তখন তিনি জানতেন না যে বাজপাখীর কবলগত তিনি। বুদ্ধদেব কনিষ্ঠের দিকে জিজ্ঞাস্বধৃষ্টিতে চেয়ে বললেন, কোথায় যাবে নন্দ ? —গৃহ ? গৃহে আসক্ত হয়ে না। কেননা, গৃহ—তৃষ্ণ, রাগ, বিবাদ, মস্থা, মান, স্পৃহা, ভয়, দৈন্য, মনঃপীড়া ইত্যাদির নিদান এবং জন্ম-মরণের আলবাল । গৃহ ছেড়ে বাইরে এসেছ আমারই ইচ্ছায়। আমি তোমাকে স্নেহ করি । তোমার মধ্যে আধ্যাত্মিক সম্ভাবনা রয়েছে। বৃথা গৃহবাসী হয়ে সে সম্ভাবনা নষ্ট ক'রো না। জাগতিক মুখ ছুদিনের, তার জন্তে চিরস্থায়ী স্বথকে নষ্ট করবে কেন ? আমার ইচ্ছা তুমি প্রত্ৰজ্য গ্রহণ কর। রাজকুমার নন্দের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। এ কি সব্বনেশে কথা পূজনীয় জ্যেষ্ঠের মুখে ! ভগবান জিন তার সঙ্গে রহস্ত করছেন না তো ? বুদ্ধদেব কনিষ্ঠ ভ্রাতাকে নিরুত্তর দেখে আবার বললেন, কি নন্দ ? কথা বললে না যে ? নন্দ অতীব বিনয়ের সঙ্গে বললেন, ভস্তে, আমি সম্প্রতি বিবাহ করেছি, আপনি জানেন । আমি প্ৰব্ৰজা গ্রহণ করবার যোগ্য নই। মন যদি—মানে—সংসারের দিকেই থাকে, প্রত্ৰজ্য গ্রহণ করা মিথ্যাচার হবে না কি ? মিথ্যাচারে অভিরুচি হয় না, দেব। নন্দ জানতেন না মহামানবের বজ্ৰকঠোর নির্মম দৃষ্টি তার ওপর নিপতিত। পাথরের দেবতার মত তিনি নির্বিকার, শিষ্যের কোনও দুর্বলতাকে প্রশ্রয় দিতে রাজী নন। তাকে তিনি সাধনোজ্জল আত্মার সত্যদৃষ্টি ও নিৰ্ব্বাণ দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। যাবে কোথায় বাবাজি । ধীরে ধীরে বুদ্ধদেব বললেন, শোন । প্রেম ক্ষণস্থায়ী, অনিত্য। যতদিন যৌবন, প্রেম ততদিন। রমণীর সৌন্দৰ্য্যও ছুদিনের। স্বপ্ন-দৃষ্ট ব্যাঘ্র বা অঙ্গরী স্বপ্নাদ্রষ্টার নিজেরই একটি অংশ। এক অখণ্ড আমিই মোহগ্ৰস্ত অবস্থায় নিজেকে বহুরূপে দেখছে । জগৎ কোথায় ? জগৎ নেই। 疊 * রাজকুমার নন্দ আয়ত স্বন্দর চক্ষু ছুটি তুলে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার মুখের দিকে চেয়ে রইলেন। চক্ষে ব্যাধপীড়িত মৃগের কাতর দৃষ্টি । ভগবান জিন বললেন, শোন নন্দ । তোমার কথা মিখ্যা নয়, তুমি ঠিকই বললে। কিন্তু, কি জান, পুরুষকার একটা খুব বড় জিনিস। চেষ্টা ছাড়া কিছু হয় না। হাত-পা গুটিয়ে বলে থাকলে জন্ম বৃথা যাবে, বার বার জন্মমৃত্যুর যুপকাষ্ট্রে ব্রাহ্মণদের যঙ্গীয় পশুর মত বলি প্রদান করবে নিজেকে নিজে । এ থেকে কোন দিন উদ্ধার পাবে না, মুক্তি পাবে না । সেটা ভাল, না এই এক জন্মেই দেহ, কালও অহঙ্কাররূপে বন্ধকে নিৰ্ম্মম ভাবে ধ্বংস ক’রে