পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

5 e 8 বিভূতি-রচনাবলী পারবেন ? এদেশে মাইনের বদলে ধান দেয়। না, সে-সব আপনার কাজ নয়। তা আপনি তো এখানে জলে পড়ে নেই ? হাতে কিছু নেই, একদিন হবেই। যতদিন না হয়, এখানে থাকুন। আপনাকে এ অবস্থায় কোথাও যেতে দেব না। এখানে থাকতে কষ্ট হচ্ছে বোধ হয়, না ? সত্যি কথা বলুন। —সত্যি কথা কি সব সময় বলা যায় মালতী ? —কেন, বলুন না কি বলবেন ? - - —এখন থাকৃ, আমার কাজ আছে। শোন, উদ্ধবদাসের একতারাটা এখানে রইল, ব’লে তাকে । তোমার জন্তে সারানো হ’ল না । মাল্পতী অবাক হয়ে চেয়ে থেকে বললে—কোথায় যাবেন ? শুনুন। বা রে, অদ্ভুত মানুষ কিন্তু আপনি ! বাইরের মাঠে এসে দাড়িয়ে মনে হ’ল আকাশ-বাতাসের রূপ ও রং যেন এই এক মুহুর্তের মধ্যে বদলে গেছে আমার চোখে । মালতী ও-কথা বললে কেন যে, আপনাকে এ অবস্থায় কোথাও যেতে দিতে পারব না ?—এই সেই মাঠ, সেই নীলাকাশ, মাঠের মধ্যে দ্বারবাসিনীর কামারদের কাটানো বড় দীঘিট, সবই সেই আছে—কিন্তু মালতীর মুখের একটি কথায় সব এত মুন্দর, এত অপরূপ, এত মধুময় হয়ে উঠল কেন ? ঠিক সেই অদ্ভুত রাত্রিটির মত–মাঠের মধ্যে নির্জন নদীর ধারে শুয়ে যেমন হয়েছিল সেদিন। অনুভূতি হিসেবে দুই-ই এক। কোন প্রভেদ নেই দেখলুম। কোথায় সেই বিরাট দেবতা, আর কোথায় এই মালতী ! তারপর দিন-কতক ধরে মালতীর সঙ্গে কি জানি কেন আমার প্রায়ই দেখা হয় । সময়ে অসময়ে, কারণে-অকারণে ও আমার সামনে যখনই এসে পড়ে কিংবা কাছ দিয়ে যায়, দাড়িয়ে দুটো কথা না বলে যায় না। হয়ত অতি তুচ্ছ কথা—বসে আছি, সামনে দিয়ে যাবার সময় বলে গেল—বসে আছেন । এ-কথা বলবার কোন প্রয়োজন নেই—কিন্তু সারাদিনের এই টুকরো টুকরো অকারণ কথা, একটুখানি হাসি, কৃত্রিম শ্লেষ, কথন-বা শুধু চাহনি’-এর মধ্যে দিয়ে ওর কাছে আমি অনেকটা এগিয়ে যাই—ও আমার কাছে এগিয়ে আসে। এত করে বুঝি ও আমার অস্তিত্বকে উপেক্ষ ক'রে চলতে পারে না—ও আমার সঙ্গে কথা ব’লে আনন্দ পায় । বিকেলে যখন ওর সঙ্গে এক-এক দিন গল্প করি, তখন দেখি ওর মনের চমৎকার একটা সজীবতা আছে। নিজে বেশী কথা বলতে ভালবাসে নী—কিন্তু শ্রোতা হিসেবে সে একেবারে প্রথম শ্রেণীর। যে-কোন বিষয়ে ওর কৌতুহল জাগানো যায়—মনের দিক থেকে সেটা বড় একটা গুণ। এমনভাবে সকৌতুহল ভাগর চোখ দুটি তুলে একমনে সে শুনবে—তাতে যে বলছে তার মনে আরও নতুন নতুন কথা যোগায়, ওকে আরও বিস্মিত করবার ইচ্ছে হয়। মালতী বড় চাপা মেয়ে কিন্তু—এতদিন পরে হঠাৎ সেদিন উদ্ধবের মুখে শুনলাম যে ও বেশ সংস্কৃত জানে। ওর বাবার এক বন্ধু ত্রিগুণাচরণ কাব্যতীর্থ নাকি শেষ বয়সে এই আখড়ায় ছিলেন, এইখানেই মারা যান। তার কেউ ছিল না—মালতীর বাবা তখন বেঁচে—তিনিই এখানে তাকে আশ্রয় দেন। ত্রিগুণা-পণ্ডিতেরই কাছে মালতী তিন-চার বছর সংস্কৃত পড়েছিল। মালতীকে জিজ্ঞেস করতেই মালতী বললে—এখন আর ওসব চর্চা নেই, ভূলে গিয়েছি। সামান্ত একটা ধাতুর রূপও মনে নেই। তবে রঘুর শ্লোক অনেক মুখস্থ আছে, বা যা ভাল লেগেছিল তাই কিছু কিছু মুখস্থ করেছিলাম, সেইগুলো ভুলিনি। তবে সহজ ভাষা যদি হয়, পড়লে মানেটা খানিকটা বুঝতে পারি। সে এমন কিছু হাতী-ঘোড়া নয়। উদ্ধব