পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাৰলী "לל צ তুলতে হবে। উদ্ধব বাবাজী চিরদিন থাকবেন না বলেই তো আমার এখানে আরও থাকা দরকার। বাবার ধানের জমি পাঁচজনে লুটেপুটে খাবে অথচ আখড়ার দোর থেকে অতিথবোষ্টম গরীব লোকে ফিরে যাবে খেতে না পেয়ে, এ আমি বেঁচে থেকে দেখতে পারব না । তাতে কোথাও গিয়ে আমার শাস্তি হবে ? মালতীর মুখে এ ধরনের গম্ভীর কথা—বিশেষ করে ওর নিজের জীবন নিয়ে—এই প্রথম শুনলাম। সব জিনিস নিয়ে ও হালকা হাসি-ঠাট্টা ক'রে উড়িয়ে দেয়, এই ওর স্বভাব । ও এ ধরনের কথা বলতে পারে তা আমি ভাবি নি। বললাম—মালতী, এটা কি তোমার মনের কথা ? জীবনটা এই ক'রে কাটাবে ? এতেই শাস্তি পাবে ? আমি যে প্রস্তাব করেচি, তাতে তুমি তাহলে রাজী নও? কারণ আমি এখানে থাকতে পারব না চিরকাল এটা নিশ্চয় । শেষ কথাটা বলতে আমার বুক বেদনায় টনটন করে উঠল, তবুও বলতে হ’ল । মালতী অনেকক্ষণ বিমুখী হয়ে বসে রইল। কাপড়ের একটা আঁচল পাকিয়ে অন্তমনস্ক ভাবে ছেলেমানুষের মত সেটা নিয়ে নাড়া-চাড়া করলে অনেকক্ষণ । আমার মনে হ’ল ও হয়ত কাদছে, নয়ত কান্না চেপে রাখবার চেষ্টা করছে। তার পরে আমার দিকে একবার চেয়েই আবার মুখ ফিরিয়ে বললে—কি করব বলুন, আমার অদৃষ্ট্রে ভগবান এই লিখেছেন, এই আমায় করতে হবে। আমার কেমন একটা অভিমান হ’ল, বললাম—এই তাহলে তোমার শেষ কথা ? বেশ মালতী । মালতী সে কথার উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইল মাথা নীচু করে। আবার আমার মনে হ’ল ও কঁদিছে, কিম্বা কান্না চেপে রাখবার চেষ্টা করছে—একবার মনে হ’ল ওর ডাগর চোখ ছুটি জলে ভরে এসেছে—কিন্তু অভিমানের আবেগে আমি সেদিকে ফিরেও চাইলাম না। রাত্রে বাইরে বসে ভাবলুম। সারারাত্রিই ভাবলুম। মালতীকে ছেড়েই যেতে হ'ল শেষ পৰ্য্যন্ত ? ও না এক দিন আমায় বলেছিল--"আখড়ায় কত কাজ বাকী আছে মনে নেই ? আমার ওপর কিসের দাবিতে এ কথা বলেছিল ও ? সে দাবি অগ্রাহ করে নিষ্ঠুর ভাবে যাব চলে ? যদি না যাই—তবে এখানে আখড়ার মোহন্ত সেজে চিরকাল থাকতে হবে। এই গ্রাম্য বৈষ্ণবদের সঙ্কীর্ণ গণ্ডী ও আচার-সংস্কারের মধ্যে নিজেকে জড়িয়ে ফেলতে হবে। নিস্তব্ধ তারাভরা রাত্রি । দীঘির পার থেকে হু-হু হাওয়া বইছে। নীল আকাশের দেবতা, র্যার ছবি এই বিশাল মাঠের মধ্যে সন্ধ্যার মেঘে, কালবৈশাখীর ঝোড়ে হাওয়ায়, এই রকম তারাভরা অন্ধকার আকাশের তলে কতবার আমার মনে এসেছে, র্তাকে পাওয়া আমার হঠাৎ ফুরিয়ে না যায়.যে দেবতা সকল ধৰ্ম্মের অতীত, দেশকালের অতীত ...যার বেদী যেমন এই পৃথিবীতে মানুষের বুকে, তেমনি ওই শাশ্বত নীলাকাশে অনন্ত নক্ষত্রদলের মধ্যে.মৰ্ত্তে ও অমৰ্ত্তে র্তার বীণার দুই তার...আমার মনে হোমের আগুন তিনি প্ৰজলিত রাখুন সুদীর্ঘ যুগসমূহের মধ্যে শাশ্বত সময় বোপে। আমার যা-কিছু মনের শক্তি, যা-কিছু বড়, তাই দিয়ে তাকে বুঝতে চাই। গৰ্ত্তীর মধ্যে তিনি থাকেন না। পরদিন খুব ভোরে—আখড়ার কেউ তখনও বিছানা থেকে ওঠে নি—কাউকে কিছু না জানিয়ে আমি দ্বারবাসিনীর আখড়া থেকে বেরিয়ে পড়লুম। কিসের সন্ধানে বেরিয়েছি তা আমি জানি লে—আমার সে সন্ধানের আশা আলেয়ার মত হয়ত আমাকে পথভ্রান্ত ক’রে পথ