পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

〉?bー বিভূতি রচনাবলী দাদার কাছে গিয়ে । রোদে দাড়িয়ে আছে কেন ? দেওর আর মামাশ্বশুর আমাদের থেকে একটু দূরে বসেছে। কি একটা পরামর্শ আঁটছে দুজনে, বেশ বুঝতে পারা গেল । রাণীর ভাই একবার ভয়ে ভয়ে বললে—থানায় যায় নি তো ? আমাদের দলের কেউ কেউ বল্লে—ওরা নইলে আরও লোক আনতে গিয়েচে । একটা মারামারি না করে দেখছি ছাড়বে না । রাণীর দাদা বললে—সেটা কি ভাল হবে ? তার চেয়ে দিই না গহনা ওদের হাতে ? আমি বুঝিয়ে বল্লুম—কেন তুমি গহনা দিতে যাবে? এ গহনা ওরা দেয় নি, দিয়েছেন তোমার বাবা । ওদের কোন অধিকার নেই এতে । রাণীর শ্বশুরবাড়ির যেমন গতিক দেখচি, তাতে মনে হয়, সেখানে ওর স্থান হবে না। ওই গহনাগুলোই ওর সম্বল। গহনার মধ্যে তো দেখছি একছড়া হার, আর হাতের চুড়ি কগাছা, আর তো কিছু নেই। তাই বা কেন হাতছাড়া করবে ? গুগু আনে, আমরাও পুলিসে খবর দিতে পারি। ওদের ফিরতে দেরি দেখে ভেবেছিলুম ব্যাপারটা আর বোধ হয় গড়ালো না ; কিন্তু রাণীর অদৃষ্টে সেদিন আরও দুঃখ ছিল। একটু পরে সত্যিই ওরা একদল লোক নিয়ে ফিরে এল । আমাদের দেখিয়ে বললে—এঁরা কোথা থেকে এসেছে চিনি নে। উনি আমার বৌদিদি, মা আসতেন শ্মশানে, কিন্তু তিনি বাতের ব্যথায় নড়তে পারেন না। বৌদিদির ভাইয়ের মতলব গহনাগুলো হাতিয়ে নেওয়া, তাই বোধ হয় এই সব বন্ধুর দল এসেছে। আবার একটা গোলমাল, তর্ক-বিতর্ক, চেঁচামেচি শুরু হোল । তখন গোলমাল শুনে পুলিস এসে না পড়লে হাতাহাতি পৰ্য্যস্ত হতে বাকী থাকত না। আমাদের দুই দলকেই থানায় যেতে হবে বলে । ইতিমধ্যে দাহকাৰ্য্য শেষ হয়ে গিয়েছিল—আমরা রাণীকে স্নান করিয়ে নিলাম । থানায় গিয়ে ঘণ্টাখানেক আটকে থাকতে হোল । নানারকম জেরা জবানবন্দী চললো আমাদের উপর। রাণী তো ভয়েই সারা । সে ভাবলে গহনাগুলো খুলে না দেওয়ার অপরাধে পুলিস এখুনি তাকে হাজতে আটকে রাখবে। অপর পক্ষের লোকেরা নিজেদের সাচ্চ প্রতিপন্ন করতে আমাদের ঘাড়ে নানারকম দোষ চাপালে, এমন কি রাণীর সম্বন্ধেও দু'একটা এমন কথা বল্লে, যা থানার বাইরে বললে আমাদের ছোকরার ওদের হাড় গুড়িয়ে দিত। বেলা তিনটের সময় থানা থেকে আমাদের ছুটি হোল । রাণীকে এখন কোথায় পাঠানো যায় ?••• ওর শ্বশুরবাড়িতে ওকে নিয়ে তোলা আমাদের কেউ সমীচীন মনে করলে না—বিশেষ করে এইমাত্র যখন তার দেওরের সঙ্গে এই কাণ্ডটা ঘটে গেল। আমরা ওর ভাইকে পরামর্শ দিলাম, ওকে বাপের বাড়ি নিয়ে যেতে, নইলে এক শ্বশুরবাড়ীতে ওকে রেখে গেলে দেওর আর শাশুড়ীতে মিলে ওর যা দুর্দশ করবে, সে কল্পনা না করাই ভালো। ভাইয়ের কাছে আবার দু'জনের যাওয়ার মত ভাড়া নেই। আমাদের যার কাছে যা ছিল দিয়ে দু’জনের দু'ধান টিকিট কিনে ওদের শেয়ালদা স্টেশনে ট্রেনে উঠিয়ে দিতে এলাম । z শুনলুম ও বিয়ের পর জোড়ে একবার বাপের বাড়ি গিয়েছিল বরের সঙ্গে নববধূর সাজে, সেই যে এসেছিল, আর এই যাচ্ছে । সেই কথা মনে হওয়ার দরুণ বা অন্ত কিছু জানিনে, যাবার সময় রাণী খুব কাদতে লাগলো। এতক্ষণ ও তেমন কাদে নি। সারাদিনে যে ঝড় ওই মেয়েটার ওপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে,