পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨:૦ বিভূতি-রচনাবলী দাও রসগোল্লার— উদ্ধব দাসকে অগত্য নগদ ছ'আনা পয়সা দিতে হোল মাঝির হাতে । মেয়েমানুষের নাই পেলে কি আর রক্ষে রাখে লোক ? যাকগে । - কখন গাড়ি আসে নাভারনের ওরা কিছুই জানে না। স্টেশনে গিয়ে জিগ্যেস ক’রে জান। গেল নাভারনের গাড়ি আসবে কাল ভোরবেলা। কেউ জামে না সেকথা। পাচুদাসী স্বামীকে বকলে, না জেনেশুনে আসো কেন ? নৌকোতে রাত কাটালে দিব্যি হোত। এখানে কি শোবার জায়গা আছে ? এত ভিড়, এত লোকের চিৎকার—মাগো, ইন্টিশান নয়—যেন কুঁদিপুরের গাজনতলায় আড়ং বসেচে। উদ্ধব দাস অভিজ্ঞতার অটুট গাম্ভীর্য্যের সঙ্গে বলে—তুই থাম দিকি । তুই চিনিচিস্ কেবল কুঁদিপুরের গাজনতলার আড়ং—দেথলি বা কি জীবনে ? —তুমি খুব দেখেচে তো ? তা হোলেষ্ট হোলোঁ— —তোর চেয়ে তো বেশি। আমি আসিনি বনগী ইন্টিশান ? শেয়ালদ’ গিইচি আলপটলের আডতে । এই রেলে চডে যেতি হয়। সাড়ে চোদ আনা ভাড়া। এই দিকি— উদ্ধব দাস আঙ্গুল দিয়ে কোলকাতা লাইনের ডিসট্যান্ট সিগন্তালটা দেখালে । উদ্ধব দাস জিগ্যেস করে একজন কুলীকে—বলি শোনে, একটু ভালো জল পাওয়া যায় ক’নে ? কুলী আধা বাংলা আধা হিন্দিতে যা বলে গেল তার অর্থ এই—ভালো জল আমি পাব কোথায় ? নিজে খুজে ছাখে। একজন ওদের বলে দিলে, ওভারব্রিজের ওপর বিছানা করে শুতে । ওখানে হাওয়া অাছে, মশা লাগবে না, প্ল্যাটফৰ্ম্মে বেজায় মশা । ওরা তাই করলে বটে, কিন্তু রাতে পাচুদাসীর মোটে ঘুম হলো না। হৈ-চৈ চিৎকার, রেলগাড়ি আসচে সারা রাত ধরে । কত কষ্টে ভোর হোল । রাত আর পোহায় না । ঘুমজড়িত কণ্ঠে পাচুদাসী বল্লে—ই্যাগে, ওই চা কি লোকের খাবার সময় অসময় নেই গা ? সারা রাতই চা গরম ! লোকে ঘুমূবে না চা খাবে ? চক্ষেও কি ওদের ঘুম নেই ? এমন অনাছিষ্টি কাণ্ডও যদি কখনো দেখে থাকি ! ভোরে নাভারনের ট্রেন এল । লোকজন সব উঠলো। ওরাও উঠল। আবার সেই ছোট খোকার মুখ মনে পড়লো পাচুদাসীর। সেই ছোট সুন্দর মুখখানি, সম্মুখের এক অজানা দিনের কোণ থেকে উকি মারচে, কিসের আড়াল ওদের দুজনের মাঝখানে ? হাজরাতলার বুড়ো হাজরা ঠাকুর কি সে আড়াল দূর করতে পারবেন। নাভারন ছোট্ট ইন্টিশান । সামনের চওড়া পাকা রাস্ত গিয়ে ওধারের বড় রাস্তায় মিশেচে । বড় বিলিতি চটকগাছের সারি পথের দুধারে। পাচুদাসী বল্লে—ও রাস্তা কোথাকার গো ? উদ্ধব দাস জানে না। বল্লে—কি জানি ? বলতে পারিনে। একজন গাড়োয়ান ধানের স্বস্তা নামাচ্ছিল গরুর গাড়ি থেকে, সে বল্লে—ওই রাস্তা ? ও গিয়েছে যশোরে, ইদিকে কলকাতায় । ওর নাম যশোর রোড। যশোর রোড। যশোর রোড ! পাচুদাসীর মুখে হাসি এসে পড়ে অকারণে ! কি নাম যে বাপু ! উদ্ধব দাস সেই গাড়ির গাড়োয়ানকে বললে—নিশেনখালির হাজরাতলায় নিয়ে যাব ?