পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্টি-প্রদীপ জন্তি । মোহন্ত বাবার গদীতে দিয়ে আসব। @ সেই দিন বিকেলে নিমৰ্চাদ ও তার বেী পূজো দিতে এল গদীতে। নবীন মুহুরী তাদের কাছে রেট-মত প্রণামী ও পূজোর খরচ আদায় করলে অবিশুি—তা ছাড়া নিমৰ্চাদের বে। নিজের হাতে সেই তিনটে টাকা বড়বাবুর সামনের রূপোর থালায় রেখে দিয়ে বড়বাবুর পায়ের ধুলো নিয়ে কোলের খোকার মাথায় মুখে দিয়ে দিলে। * তার পর সে একবার চোখ তুলে মোহন্তদের দিকে চাইলে এবং এদের ঐশ্বৰ্য্যের ঘটাতেই সম্ভবত অবাক হয়ে গেল—বুদ্ধিহীন চোখে শ্রদ্ধা ও সন্ত্রমের সঙ্গে টাকা-পয়সাতে পরিপূর্ণ ঝকঝকে রূপোর থালাটার দিকে বার-কতক চাইলে, রঙীন শালুও গাদাফুলের মালায় মোড় থামগুলোর দিকে চাইলে—জীবনে এই প্রথম সে গোসাইয়ের থানে এসেচে, সব দেখেশুনে লোকের ভিড়ে, মোহস্ত মহারাজের আড়ম্বরে, অনবরত বর্ষণরত প্রণামীর বম্বমানি আওয়াজে সে একেবারে মুগ্ধ হয়ে গেল। কতক্ষণ ই ক'রে দাড়িয়ে রইল, বাইরে থেকে ক্রমাগত লোক ঢুকচে, তাকে ক্রমশঃ ঠেলে একধারে সরিয়ে দিচ্চে, তবুও সে দাড়িয়েই আছে। ওকে কে একজন ঠেলা দিয়ে এগিয়ে আসতে গেল, আমি ওর দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারিনি। ওর মুখচোখের মুগ্ধ ভক্তিস্তব্ধ দৃষ্টি আমায়ও মুগ্ধ করোচ—এ এক নতুন অভিজ্ঞতা আমার জীবনের, এই বাজে শালুর বাহার আর লোকের হৈ চৈ আর মেজবাবু, বড়বাবুর চশমামণ্ডিত দাম্ভিক মুখ দেখে এত ভাব ও ভক্তি আসে —যে ঠেলা দিয়ে এদিকে আসছিল, আমি তাকে ধমক দিলুম। তার পর ওর চমক ভাঙতে ফিরে বাইরে বেরিয়ে গেল । ওরা চলে গেলে একটি বৃদ্ধ এল, তার বয়স অনেক হয়েচে, বয়সে গলার স্বর কেঁপে গিয়েচে, হাত কঁপিচে, সে তার আঁচল থেকে একটি আধুলি খুলে থালায় দিতে গেল। নবীল মুহুরী বললে—রও গো, রাখ—আধুলি কিসের ? বুঢ়ী বললে—এই-ই ঠাকুরের মা-ন-ত শো-ধে-র পে-র-ণা-মী— নবীন মুহুরী বললে—পাচ সিকের কমে ভোগের পূজো নেই–পাচ সিকিতে এক টাকা গদীর নজর— বুড়ী শুনতে পায় না, বললে—ক’ত ? নবীন আঙুল দেখিয়ে চেচিয়ে বললে—এক টাকা— বুড়ী বললে—আর নেই, মা-দু-র কি-নে-লাম ছ-আ-নার, আর— নবীন মুহুরী আধুলি ফেরত দিয়ে বললে—নিয়ে যাও, হবে না। আর আট আনা নিয়ে এস— বড়বাবু একটা কথাও বললেন না। বুড়ী কাপতে কাপতে ফিরে গেল এবং ঘন্টাখানেক পর সিকিতে, দু আনিতে, পয়সাতে একটা টাকা নিয়ে এসে প্রণামীর থালার রাখলে। ওরা চলে গেলে আমার মনে হ’ল এই সরল, পরম বিশ্বাসী পল্লীবধু এই বৃদ্ধ ওদের কষ্টার্জিত অর্থ কাকে দিয়ে গেল—মেজবাবুকে, বড়বাবুকে ? এই এত লোক এখানে এসেছে, এরা সবাই চাৰী গরীব গৃহস্থ, কি বিশ্বাসে এখানে এসেছে জানি নে—কিন্তু অমানবদনে খুনীর সঙ্গে এদের টাকা দিয়ে যাচ্চে কেন ? এই টাকায় কলকাতায় ওঁদের স্ত্রীরা গহনা পরবেন, মোটরে চড়বেন, থিয়েটার দেখবেন, ওঁরা মামলা করবেন, বড়মাহুবি, সাহেবিয়ানা করবেন—ছোটবাবু বন্ধুবান্ধব নিয়ে গানবাজনার মজলিসে চপ-কাটলেট ওড়াবেন, সেই জন্তে ? পরদিন সকালে দেখলাম নিমৰ্চাদের স্ত্রী পুকুরে স্বান করে সারাপথ সাষ্টাঙ্গ নমস্কার করতে করতে লোকামাখা গারে বটতলায় ধর্ণ দিতে চলেচে-আর নিমটার ছেলে কোলে নিয়ে