পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b’e বিভূতি-রচনাবলী বুঝেচি ওর মধ্যে সত্যি আছে অনেক। - মেজবাবু কৌতুক ও বিদ্রুপ মিশ্রিত হালি-মুখে আমার কথা শুনছিলেন–কথা শেষ হ’লে তিনি কুঞ্জ নায়েবের দিকে চেয়ে হাসলেন। নবীন মুহুরীর দিকে চাইলেন না, কারণ সে অনেক কম দরের মাহব। স্টেটের নায়েবের সঙ্গে তবুও দৃষ্টি-বিনিময় করা চলে। আমার দিকে চেয়ে বললেন—কতদূর পড়াশুনা করেচ তুমি ? —আই-এ পাস করেছিলাম শ্রীরামপুর কলেজ থেকে— —তাহলে তোমায় বোঝানো আমার মুশকিল হবে। মোটের ওপর ও সব কিছু না। নিউরোটিক যারা—নিউরোটিক বোঝ ? যাদের স্বায়ু দুৰ্ব্বল তাদের ওই রকম হয়। রোগই বইকি, ও এক রকম রোগ— আমি বললাম—মিথ্যে নয় যে তা আমি জানি । আমি নিজের জীবনে অনেকবার দেখেচি —ও-সব সত্যি হয়েচে । তবে কেন হয় এইটেই জানি নে, সেই জন্যেই আপনাকে জিজ্ঞেস করচি। আমি সেন্ট ফ্রান্সিস অফ অসিসির লাইফ-এ পড়েচি তিনিও এরকম দেখতেন— মেজবাবু ব্যঙ্গের সুরে বললেন—তুমি তাহলে—তুমি সেন্ট হয়ে গিয়েচ দেখচি ? পাগল কি আর গাছে ফলে ? . নবীন ও কুঞ্জ দুজনেই মেজবাবুর প্রতি সন্ত্রম বজায় রেখে মুখে কাপড় চাপা দিয়ে হাসতে লাগল । আমি নানাদিক থেকে খোচ খেয়ে মরীয়া হয়ে উঠলাম। বললাম—আর শুধু ওই দেখি যে তা নয়, অনেক সময় মরে গিয়েচে এমন মামুষের আত্মার সঙ্গে কথা বলেচি, তাদের দেখতে পেয়েচি । নবীন মুহুরীর বুদ্ধিহীন মুখে একটা অদ্ভুত ধরনের অবিশ্বাস ও ব্যঙ্গের ছাপ ফুটে উঠল, কিন্তু নিজের বুদ্ধির ওপর তার বোধ হয় বিশেষ আস্থা না থাকাতে সে মেজবাবুর মুখের দিকে চাইলে । মেজবাবু এমন ভাব দেখালেন যে, এ বদ্ধ উন্মাদের সঙ্গে আর কথা বলে লাভ কি আছে ! তিনি কুঞ্জ নায়েবের দিকে এভাবে চাইলেন যে, একে আর এখানে কেন ? পাগলামি চড়ে বসলেই একটা কি ক’রে ফেলবে এক্ষুনি । আমি আরও মরীয়া হয়ে বললাম—আপনি আমার কথায় বিশ্বাস করুন আর নাই করুন তাতে যে-জিনিস সত্যি তা মিথ্যে হয়ে যাবে না। আমার মনে হয়, আপনি আমার কথা বুঝতেও পারেননি। যার নিজের অভিজ্ঞতা না হয়েচে, সে এসব বুঝতে পারবে না, এ-কথা এতদিনে আমি বুঝেচি। খুব বেশী লেখাপড়া শিখলেই বা খুব বুদ্ধি থাকলেই যে বোঝা যায় তা নয়। আচ্ছা, একটা কথা আপনাকে বলি, আমি যে-ঘরটাতে থাকি, ওর ওপাশে যে ছোট বাড়িটা আছে, ভাঙা রোয়াক যার সামনে—ওখানে আমি একজন বড়োমামুষের অস্তিত্ব অনুভব করতে পেরেচি—কি করে পেরেচি, সে আমি নিজেই জানি নে—খুব তামাক খেতেন, বয়স অনেক হয়েছিল, খুব রাগী লোক ছিলেন, তিনি মারা গিয়েচেন কি বেঁচে আছেন তা আমি জানি নে। ওই জায়গাটার গেলেই এই ধরনের লোকের কথা আমার মনে হয়। বলুন তো ওখানে কেউ ছিলেন এ-রকম ? কুঞ্জ নায়েবের সঙ্গে মেজবাবুর অর্থস্বচক দৃষ্টি-বিনিময় হ’ল । মেজবাবু শ্লেষের সঙ্গে বললেন —তোমাকে যতটা সিম্পল ভেবেছিলাম তুমি তা নও দেখচি। তোমার মধ্যে ভণ্ডামিও বেশ আছে—তুমি বলতে চাও তুমি এত দিন এখানে এসেচ, তুমি কারও কাছে শোননি ওখানে কে থাকতো ?