পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৪৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উমি্মখের Šes আমরাই বা কম কি ? আমি তো দেখি এসব কিছুই নয় । এবার ট্রপিকসের কোনও দেশে ( যদিও বাংলা ওর মধ্যে পড়ে না ) জন্মেচি, দীর কোনও জন্মাস্তরে যাব ইউরোপে কি মাকিন যুক্তরাষ্ট্রে কিংবা বহিস্পতি কি অন্য কোথাও গ্রহান্তরে, কি কোন দরে নক্ষত্রে—আমি অমর আত্মা, আমি দেশকালের অতীত—কোন দেশ আমার, কোন দেশ পর ? সকলকেই ভালবাসতে চাই চবদেশ বিদেশ নিবিশেষে, সকলের সব ভালটুকু নিতে চাই—এই আমার, এই তোমার— এ সংকীর্ণতা যেন থাকে না । এই দেশে জমেচি, মানুষ হয়েচি, কিন্ত এদেশের সঙ্গে নিজেকে অনেকটা মিশিয়ে দিলেও যেন খানিকটা আছি কৌতুহলী দশকের মত, যেন এই বক্ষলতাবহল সবুজ দেশে এসে দেখে এবার আশ্চৰ্য্য হয়ে গেছি, প্রতিদিন দেখচি আজ চল্লিশ বছর ধরে, তব তৃপ্তি নেই, এ নিত্য নতুন আমার কাছে, কোনও দিন বুঝি এর রপ একঘেয়ে লাগবে না । সাতবেড়ের একটি ছেলে গল্প ও কবিতা লিখে মাঝে মাঝে আমার হাতে দেয়। গত দু-তিন বছর থেকে দিচ্ছে । গরীবের ছেলে, পয়সার অভাবে লেখাপড়া শিখতে পারে নি, কিস্ত লেখে মন্দ নয়। গলেশ্বর হাত আছে, তবে টেকনিকের ওপর তেমন দখল নেই, থাকবার কথাও নয়—টেকনিক জিনিসটা কতকটা আসে এমনি, কতকটা আসে ভাল লেখকদের গল্পের রচনারীতি দেখে । তার জন্যে পড়াশুনোর দরকার হয় । এ ছেলেটির সেরাপ বই পড়বার সংযোগ কোথায় ? মচি-বাড়ির সামনে বটতলায় তার সঙ্গে দেখা । সে আমার সঙ্গে আলাপ করবে বলেই ওখানে বসে অপেক্ষা করছিল, বললে । কাঁচুমাচু হয়ে জিজ্ঞেস করলে—আর-বছরের সেই লেখাগুলো কি দেখেছিলেন ? 懿 ওর সঙ্গে আমার দেখা হয় বছরে একবার, এই জ্যৈষ্ঠ মাসের ছটিতে। সেই সময় ও আমার কাছে ওর লেখা দেয়, ইচ্ছেটা এই ষে কলকাতার কোনও কাগজে ছাপিয়ে দেবো । কিন্ত কাগজে ছাপাবার উপর্যন্ত হয় না ওর লেখা। তবুও আমি প্রতি বৎসর উৎসাহ দিই, এবারও দিলাম। মিথ্যে করে বললাম, তোমার গল্প বেশ ভাল হয়েছিল, কলকাতার অনেকে পড়ে খুব সংখ্যাতি করেচে। ও আগ্রহের সঙ্গে বললে—কোন গল্পটা ? আমার নাম মনে নেই ওর কোনও গল্পেরই, কাগজগুলোও কোন কালে কোথায় হারিয়ে গিয়েছে । ভেবে চিন্তে বললাম—সেই যে একটা মেয়ে ; বলতেই ও তাড়াতাড়ি বললে—ও বিয়ের কনে ? —হ’্যা, হ্যা, ও বিয়ের কনে । একটা মিথ্যে কথা পাঁচটা মিথ্যে কথা এনে ফেলে । কাঁচকাটার পল পয্যন্ত বটতলার ছায়ায় ছায়ায় ও আমার সঙ্গে সঙ্গে অতীব আগ্রহ ও কৌতুহলের সঙ্গে শুনতে শুনতে এল, কলকাতার কোন কোন বড় লোক ওর গল্পের কি রকম সংখ্যাতি করেচে–কোন কাগজের সপাদক বলেচে যে, আর একটু ভাল লেখা হোলেই তারা তাদের কাগজে ছাপাবে, তার কবিতা পড়ে কোন মেয়ের খুব ভাল লেগেছিল বলে হাতের লেখা কবিতাটা আমার কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে রেখে দিয়েচে কাছে ৷ সন্ধ্যার দেরি নেই, আমি বললাম—তবে আজ যাই, আবার ফিরে নদীর ধারে মাঠে বেড়াতে যাবো । কি করো আজকাল ! ও বললে—বাড়ি বসে তো আর চলে না, তাই ওই পথের ধারে ধান চালের আড়তে কাজ নিইচে । আজ এই তিন মাস কাজ করচি। সকালে আসি আর সন্দের সময় ছটি পাই । তারপর একটু লজামিশ্ৰিত সকোচের সঙ্গে বললে—আসচে হাটে আপনাকে আর