পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S&b' বিভূতি-রচনাবলী কোথায় লেখা থাকবে এক মূখমতি আট বৎসরের বালক জীবনে প্রথম গ্রামের উত্তরমাঠে তার জ্যেঠামশায়ের সঙ্গে বেড়িয়ে এসে কি আনন্দ পেয়েছিল ? কোথায় লেখা থাকবে তার মায়ের-হাতে-ভাজা তালের পিঠে খাওয়ার সে আননের কাহিনী ? সেদিন সন্ধ্যার সময় আমাদের ঘাটে স্নান করতে নেমে নতুন-ওঠা চতুর্থীর চাদের দিকে চোখ রেখে ভাবতে ভাবতে এইসব কথা বেশী করে মনে জাগছিল। গোপালনগরের বারোয়ারীর যাত্রা দেখতে গিয়ে তাই সে ছেলেটার কথা মনে পড়লো যে আজ পচিশ বছর আগে কৃষ্ণঘোষের তামাকের দোকানের বারান্দীতে বসে তার বাবার সঙ্গে যাত্রা দেখতে দেখতে দময়ন্তীর দুঃখে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতো । সে-সব কথা যাক। অদ্ভূত এই জীবন, অপূর্ব এই স্বষ্টির আনন্দ। নিজনে বসে ভেবে দেখো, মানুষ হয়ে উঠবে। অনেককাল পরে গরীবপুরে নিমন্ত্রণ খেতে গিয়ে থিয় ও তার বোন রাণীর সঙ্গে দেখা হোল। আজ প্রায় ষোল বছর আগে ওদের বাসাতে বাড়ির ছেলের মত থাকতুম। তখন আমিও বালক, ওরা নিতান্ত শিশু । সেই থিম্বুকে যেন আর চিনতে পারা যায় না। এত বড় হয়ে উঠেচে, এত দেখতে সুন্দর হয়েচে । রাণীও তাই। কতক্ষণ তারা আমাকে কাছে বসিয়ে পুরনো দিনের গল্প করতে লাগলো আপনার বোনেদের মত, ছাড়তে আর কিছুতে চায় না। শেষকালে রাণী তার শ্বশুর-বাড়ির ঠিকান দিয়ে কলকাতায় গেলেই যেন সে ঠিকানার গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করি, এ অনুরোধ বার বার করলে । এবার আরও সকলের চেয়ে ভাল লেগেচে যেদিন রামপদর সঙ্গে বেড়াতে বেড়াতে মোল্লাহাটি ছাড়িয়ে পাচপোতায় বাওড়ের মুখে গিয়েছিলুম। এক তালীবনখাম গ্রামরাজি । আকাশের কি নীল রং, ইছামতীর কি কালো জল। নৌকাতে আসবার সময় জ্যোৎস্নারাত্রে নিজন কাশবনের ও জলের ধারের বন্সেবুড়ো গাছের ও মাথার উপরকার নক্ষত্রবিরল আকাশের কি অসীম সম্ভাব্যতার ইঙ্গিত। এই আননো দিনের ইতিহাস পাছে ভুলে যাই, তাই লিখে রেখে দিলুম। অনেককাল পরে খাতাখানা খুলে দেখতে দেখতে এইসব আনন্দের কাহিনী মনে পড়বে তাই। একটা কথা আজকাল নিজনে বলে ভাবলেই বড় মনে পড়ে। এই পৃথিবীর একটা spiritual nature আছে, আমরা এর গাছপালা, ফুলফল, আলোছায়া, আকাশ বাতাসের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেচি বলে, শৈশব থেকে এদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয়ের বন্ধনে আবদ্ধ বলে, এর প্রকৃত রূপটি ধরা আমাদের পক্ষে বড় কঠিন হয়ে পড়ে। এই অপূর্ব স্বষ্টি যে আমাদের দর্শন ও শ্রবণগ্রাহ বস্তুসমূহ দ্বারা গঠিত হয়েও আমাদের সম্পূর্ণ অজ্ঞাত ও ঘোর রহস্যময়, এর প্রভি অণু যে অসীম সম্ভাব্যতায় ভরা, মামুষের বুদ্ধি ও কল্পনার অতীত এক জটিলতায় আচ্ছন্ন, তা হঠাৎ ধরা পড়ে না। হঠাৎ বোঝা যায় না, কিন্তু কতকগুলি প্রাথমিক জ্ঞানকে ভিত্তি করে অগ্রসর হোলে আপনা-আপনি গভীর চিন্তার মুখে ধরা দেয়। এক্ষেত্রে একটা ভুল গোড়া