পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>१९ বিভূতি-রচনাবলী ধরনের উদ্দীপনা। সেটা এত বেশী যে, তা নিয়ে ভাবতেও পারি ন—ভাবলে মন অত্যন্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে। মনে হয় এই যে কলকাতার একঘেয়েমি যাকে বলচি—এ-ও চলে যাবে। সে যাত্রার বাশি যেন বেজেছে মনে হচ্চে। বহুদূরে যাত্রা। সমুদ্রের পারে—প্রশান্ত মহাসাগরের পারে। নানা দার্শনিক চিন্তা মনে আসচে, কিন্তু রাত হয়েচে অনেক—আর কিছু লিখবো না। ক'দিন বেশ কাটচে। অনেক দিন পরে ক'দিনের মধ্যে ভোম্বলবাবু, ননী, নাঙ্ক, প্রসাদ —এর সব এসেছিল। সেদিন অনেকদিন পরে রাজপুরে চললুম। খুকীর সঙ্গে দেখা হল, ভারী আদর করলে। তারপর একদিন গড়িয়ায় জলের ধারের মাঠে, আমি ও ভোম্বল বেড়াতেও গেলুম। কত কি গল্প আমার পুরনো দিনের মতই হল। একদিন আমি অবশু এক গিয়েছিলুম,—পূর্ণিমার দিন। আজ বসে বসে সেই দিনগুলোর কথা ভাবছিলুম। যাত্রীদলের ছেলে ফণি বাড়িতে খেতে এল—বাবা বধমান থেকে এলেন—তারও অনেক আগে যখন বকুলতলায় প্রথম বারোয়ারীর বেহাল বাজানো শুনে অবাক হয়ে গিয়েছিলুম—সে-সব টাটকা—তাজা, আনকোর আনন্দ এখনও কিন্তু যেন ভাবলে কিছু কিছু পাই। যেদিন সেই প্রথম বেহালা বেজেছিল, যেদিনটা বাবার সঙ্গে নৈহাটা হয়ে সিঙ্গাড়ার আলু খেয়ে কেওটা থেকে বাড়ি আসছিলুম—যেদিন চড়ক তৈরি করলুম—ঠাকুরমাদের বেলতলায় আমি নিজে ; ঠাকুরমাদের পড়ে। ঘরে পাঠশালা-কর, কড়ি খেলার আমোদ, পূবমুখে যাওয়া, মরাগাঙে মাছ ধরতে যাওয়া—শনিবারে ছুটিতে বাড়ি আসার আনন্দ—কত লিখবো । কে জীবনের এসব মহনীয় অবদান-পরম্পরার কথা লিখতে পারে? আর মনে হয় আমি ছাড়া এসবের আসল মানে আর কেই বা বুঝবে ? তা তো সম্ভব নয়—অন্ত সকলের কাছে এগুলো নিতান্ত মামুলী কথা মনে হবে। এদের পিছনে যে রসভাণ্ডার লুকানো আছে আমি ছাড়া আর কে তা জানবে ?” অনেকদিন পরে দেশে এসে বেশ আনন্দে দিন কাটচে। রোজ সকালে উঠে ইছামতীর ধারের মাঠটাতে বেড়াতে যাই, ঝাড় ঝাড় সোদালি ফুল ফুটে থাকে, এত পার্থী ডাকে . চোখ গেল, বেী-কথা-ক’, কোকিল—কত কি !...বেড়িয়ে এসে ওপাড়ার ঘাটে স্নান করতে নামি । ওপারের চরের শিমুলগাছটার মাথায় তরুণ স্বর্য ওঠে, দু'পারে কত খামল গাছপালা। সোদালি ফুলের ঝাড় মাঝে মাঝে দুলতে দেখলেই আমার মনে কেমন অপূর্ব আনন্দ ভরে ওঠে। প্রভাতে পার্থীরা যে কত স্বরে ডাকে, জলের মধ্যে মাছের ঝাক খেলা করে – জীবনের প্রাচুর্যে, সরসতার, স্বাক্টর মহিমায় অভিভূত হয়ে যাই। কতদূরের সব জীবনধারার কথা, জগতের কথা মনে হয়—আবার স্নান করতে করতে চেয়ে দেখি নদীর ধারে গোছা চিগ্‌গাছা ঘাস হেলাগোছা ভাবে জলের মধ্যে মাথা দোলাচ্ছে, একটা হয়তো খেজুর গাছ স্থানেজতলায় বাকে অক্ষ সব গাছপালাস থেকে মাখা উঠিয়ে দাড়িয়ে আছে।