পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২ e ਯਿਨੀ সার্জন ছুরি ফেলে বল্পেন—হয়ে গিয়েছে। লিণ্ট দাও, নার্স! বিমল বল্পে-স্তার, রোগীর নাড়ী নেই। হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল! সার্জন এসে নাড়ী দেখলেন। এ্যালিস্ নীরবে ওদের মুখের দিকে চেয়ে রইল। নাড়ী থেকে হাত নামিয়ে সার্জন গম্ভীর মুখে বল্লেন—বাইশটা পুরলো । এ্যালিস্ নিম্পন্দ অবস্থায় দাড়িয়ে আছে দেখে বল্পেন—চলে। নার্স, স্ট্রেচারওয়ালার এসে লাশ নিয়ে যাবে—এখন সবাই বাইরে চলে যাই— ওপরওয়ালার আদেশ পেয়ে বিমল আগে এ্যালিসের কাছে এল এবং তাকে আস্তে আস্তে হাত ধরে ধূম্রলোক থেকে উদ্ধার করে ডানদিকের বড় দরজা দিয়ে কম্পাউণ্ডের খোলী হাওয়ায় নিয়ে এল। আকাশের দিকে চোখ তুলে দেখেই এ্যালিসকে বল্লে—ঐ দেখ এ্যালিস, তিনখান। জাপানী বস্কার – এগারো ঘণ্টা সমানে ডিউটিতে থাকবার পরে বিমল, এ্যালিস, সুরেশ্বর ও মিনি বাইরের ফুটপাথে পা দিলে। চ্যাং সো লীন এ্যাভিনিউ প্রসিদ্ধ দেশনায়ক চ্যাং সে লীনের নামে হয়েছে—রেড শার্টদের প্রভাবে। সাংহাইয়ের মধ্যে এটা একটি প্রসিদ্ধ রাস্তা, রাস্তার ধারে ফুটপাথে শামিয়ানার নিচে চা ও শূওরের মাংসের দোকান। লোকজনের বেজায় ভিড়। এই এ্যাভিনিউয়ের ধারেই গভর্নমেন্ট হাসপাতাল। ওরা যখন ফুটপাথে পা দিলে, তখন হাসপাতালের বা অংশে মহা হৈ চৈ চলছে। সেপটিক-ওয়ার্ড জাপানী বোমায় চূর্ণ হয়ে গিয়েছে—সম্ভবতঃ একটা রোগীও বঁাচে নি সে ওয়ার্ডের । মিনি দেখতে যাচ্ছিল—বিমল বারণ করলে । —ওদিকে গিয়ে দেখে আর কি হবে মিনি ? চলে। আগে কোথাও একটু গরম চা খাওয়া যাক । বোমা-ফেলা ও হত্য ব্যাপারটা দেখে দেখে কদিনে ওদের গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। শুধু ওদের নয়, সাংহাইএর লোকজন, দোকানী, পথিকদেরও। নতুবা গত আধঘণ্টা ধরে হাসপাতালের ওপর বোমাবর্ষণ চলছে, চোখের সামনে এই ভীষণ প্রলয় লীলা ও মাথার ওপরে চক্রাকারে উড়নশীল তিনখানা জাপানী বম্বারকে সম্পূর্ণ উপেক্ষ করে চ্যাং সে লীন এ্যাভিনিউর চায়ের দোকান, মাংসের দোকান, ভাত-তরকারীর দোকান সব খোলা । লোকজনের দিব্যি ভিড় । রাত পৌনে আটট। হঠাৎ এ্যালিল জিগ্যেস করলে—ছেলেটি মারা গেল, তখন ক'ট ? বিমল বল্লে—ঠিক সাড়ে সাতটা। ওকথা ভেবে না এ্যালিস। চল আর একটু এগিয়ে । এক্ষুনি লাশ নিয়ে যাওয়ার ভ্যান আসবে হাসপাতালে। আমরা একটু তৃণতে যাই।