তখন ফরিদপুরের গাড়ী চলে গিয়েচে। আমরা শব্দ শুনে বুঝি কখন কোন্ গাড়ী এল গেল।
—একা থাকতেন, আর রাত পর্য্যন্ত রান্না করছিলেন—এত কি রান্না?
—সেদিন মাংস এনেছিলেন হাট থেকে। মাংস সেদ্ধ হতে দেরি হচ্ছিল।
—আপনি কি ক’রে জানলেন?
—পরে আমরা জেনেছিলাম। হাটে যারা ওঁর সঙ্গে একসঙ্গে মাংস কিনেছিল—তারা বলেছিল। তাছাড়া যখন রান্নাঘর খোলা হলো—বাবাগো!
ব’লে বৃদ্ধা যেন সে দৃশ্যের বীভৎসতা মনের পটে আবার দেখতে পেয়ে শিউরে উঠে কথা বন্ধ করলেন। সঙ্গে যে প্রৌঢ়া আত্মীয়াটি ছিলেন গাঙ্গুলিমশায়ের, তিনিও বললেন—ও বাবা, সে রান্নাঘরের কথা মনে হোলে এখনও গা ডোল দেয়!
আমি আগ্রহের সঙ্গে ব’লে উঠলাম—কেন? কেন?—কি ছিল রান্নাঘরে?
বৃদ্ধা বল্লেন—থালার চারদিকে ভাত ছড়ানো—মাংসের ছিবড়ে আর হাড়গোড় ছড়ানো।
বাটিতে তখনও মাংস আর ঝোল রয়েচে—ঘরের মেঝেতে ধস্তাধস্তির চিহ্ন—তিনি খেতে বসেছিলেন এবং তাঁর খাওয়া শেষ হবার আগেই যারা তাঁকে খুন করে তারা এসে পড়ে।
প্রৌঢ়াও বল্লেন—হ্যাঁ বাবা, এ সবাই দেখেচে। পুলিসও এসে রান্নাঘর দেখে গিয়েচে। সকলেরই মনে হোলো, ব্রাহ্মণের খাওয়া শেষ হবার আগেই খুনেরা এসে তার ওপর পড়ে।
—আচ্ছা বেশ, এ গেল বুধবার রাতের ব্যাপার। সেদিনই হাট ছিল তো?
—হ্যাঁ বাবা, তার পরদিন সকালে উঠে আমরা দেখলাম, ওঁর ঘরের দরজা বাইরের দিকে তালা-চাবি দেওয়া। প্রথম সকলেই ভাবলে উনি কোথাও কাজে গিয়েচেন, ফিরে এসে রান্নাবান্না করবেন। কিন্তু যখন বিকেল হয়ে গেল, ফিরলেন না—তখন আমরা ভাবলাম, উনি ওঁর ছেলেদের কাছে কলকাতায় গেছেন।
—তারপর?
—বিষ্যুদবার গেল, শুক্রবার গেল, শুক্রবার বিকেলের দিকে বন্ধ-ঘরের মধ্যে থেকে কিসের দুর্গন্ধ বেরুতে লাগলো—তাও সবাই ভাবলে, ভাদ্রমাস, গাঙ্গুলিমশায় হয়তো তাল কুড়িয়ে ঘরের মধ্যে রেখে গিয়েছিলেন, তাই পচে অমন গন্ধ বেরুচ্চে।
—শনিবার আপনারা কোন্ সময় টের পেলেন যে, তিনি খুন হয়েচেন?
—শনিবারে আমি গিয়ে গ্রামের ভদ্রলোকদের কাছে সব বললাম। অনেকেই জানতো না যে, গাঙ্গুলিমশায়কে এ ক’দিন গাঁয়ে দেখা যায়নি। তখন সকলেই এল। গন্ধ তখন খুব বেড়েচে! পচা তালের গন্ধ ব’লে মনে হচ্ছে না!
—কি করলেন আপনারা?
—তখন সকলে জানলা খোলবার চেষ্টা করলে, কিন্তু সব জানলা ভেতর থেকে বন্ধ। দোর ভাঙাই সাব্যস্ত হোলো। পরের ঘরের দোর ভেঙে ঢোকা ঠিক নয়—এরপর যদি তা নিয়ে কোনো কথা ওঠে। তখন চৌকিদার আর দফাদার ডেকে এনে তাদের সামনে দোর ভাঙা হোলো।