তালনবমী ২১৯ “তুই ওদের কাছে পয়সা নিস নে দাদা ।” নেপাল আশ্চর্ষ্য হয়ে বললে, “কেন রে ?”
- তাহলে আমাদের নেমুস্তন্ন করবে, দেখিস এখন ।”
“দূর | তা হয় না। আমি কষ্ট করে তাল কুড়বে—আর পয়সা নেবো না ?” রাত্রে বৃষ্টি নামে । ছ হ বাদলার হাওয়া সেই সঙ্গে। পূবদিকের জানলার কপাট দড়িবাধা ; হাওয়ায় দড়ি ছিড়ে সারারাত খটু খট্ শব্দ করে ঝড়বৃষ্টির দিনে। গোপালের ঘুম হয় না, তার যেন ভয় ভয় করে । সে শুয়ে শুয়ে ভাবচে—দাদা তাল যদি বিক্রি করে,—তবে ওরা আর নেমস্তন্ন করবে না। তা কখনো করে ? খুব ভোরবেলা উঠে গোপাল দেখলে বাড়ীর সবাই ঘুমিয়ে। কেউই তখন ওঠে নি। রাত্রের বৃষ্টি থেমে গিয়েচে,—সামান্ত একটু টিপ, টিপ বৃষ্টি পড়চে । গোপাল একছুটে চলে গেল গ্রামের পাশে সেই তালদীঘির ধারে । মাঠে এক হাটু জল আর কাদা । গ্রামের উত্তরপাড়ার গণেশ কাওরা লাঙল ঘাড়ে এই এত সকালে মাঠে যাচ্ছে । ওকে দেখে বললে, “কি খোক। ঠাকুর, যাচ্ছ কনে এত ভোরে ?” “তাল কুডুতে দীঘির পাড়ে।” “বডড সাপের ভয় খোকাঠাকুর। বর্ষাকালে ওখানে ঘেও না এক-একা ।” গোপাল ভয়ে ভয়ে দীঘির তালপুকুরের তালের বনে ঢুকে তাল খুজতে লাগলো। বড় আর কালো কুচকুচে একটা মাত্র তাল প্রায় জলের ধারে পড়ে ; সেটা কুড়িয়ে নিয়ে ফিরে আসবার পথে আরও গোটা-তিনেক ছোট তাল পাওয়া গেল । ছেলেমানুষ, এত তাল বয়ে আনার সাধ্য নেই, দুটি মাত্র তাল নিয়ে সোজা একেবারে জটি পিসীমার বাড়ী হাজির । জটি পিসীমা সবেমাত্র সদর দোর খুলে দোরগোড়ায় জলের ধারা দিচ্ছেন, ওকে এত সকালে দেখে অবাকৃ হয়ে বললেন, “fকরে খোক ?” গোপাল একগাল হেসে বললে, “তোমার জন্তে তাল এনিচি পিসীম৷ ” জটি পিসীমা আর কিছু না বলে তাল ছুটে হাতে করে নিয়ে বাড়ীর ভেতর চলে গেলেন । গোপাল একবার ভাবলে, তালনবমী কবে জিগ্যেস করে ; কিন্তু সাহলে কুলোয় না তার। সারাদিন গোপালের মন খেলাধুলোর ফাকে কেবলই অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে। ঘন বর্ধার দুপুরে, মুখ উচু করে দেখে—নারকোল গাছের মাথা থেকে পাতা বেয়ে জল ঝরে পড়চে, বঁাশ ঝাড় হয়ে হয়ে পড়চে বাদলার হাওয়ায়, বকুলতলার ডোবার কটুকটে ব্যাঙের দল থেকে থেকে ডাকচে । গোপাল জিগ্যেস করলে, “ব্যাংগুলো আজকাল তেমন ডাকে না কেন মা ?” গোপালের মা বলেন, “নতুন জলে ডাকে, এখন পুরোনো জলে তত আমোদ নেই ওদের।”
- আজ কি বার, মা ?
“সোমবার। কেন রে ? বারের খোজে তোর কি দরকার }”