বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চাদের পাহাড় SS ছ-একটা নির্বাপিত-প্রায় অগ্নিকুণ্ড। দূরে শেয়াল ডাকছে—শেয়ালের ডাক শুনলেই শঙ্করের মনে হয় সে বাংলাদেশের পাড়াগায়ে আছে—চোখ বুজে সে নিজের গ্রামটা ভাববার চেষ্টা করে, তাদের ঘরের কোণের সেই বিলিতি-আমড়া গাছটা ভাববার চেষ্টা করে—আজও সে একবার থমকে দাড়িয়ে তাড়াতাড়ি চোখ বুজলে। কি চমৎকার লাগে ! কোথায় সে ? সেই তাদের গায়ের বাড়ীতে জানালার কাছে তক্তপোশে শুয়ে ? বিলিতি-আমড়া গাছটার ডালপালা চোখ খুললেই চোখে পড়বে ? ঠিক ? দেখবে সে চোখ খুলে ? শঙ্কর ধীরে ধীরে চোখ খুললে। অন্ধকার প্রাস্তর। দূরে সেই বড় বাওবাব, গাছটা অস্পষ্ট অন্ধকাবে দৈত্যের মত দাড়িয়ে আছে। হঠাৎ তার মনে হল সামনের একটা ছাতার মত গোল খড়ের নীচু চালের ওপর একটা কি যেন নড়ছে। পরক্ষণেই সে ভয়ে ও বিস্ময়ে কাঠ হয়ে গেল। প্রকাও একটা সিংহ খডের চাল থাবা দিয়ে খুচিয়ে গৰ্ত্ত করবার চেষ্টা করছে ও মাঝে মাঝে নাকটা চালের গর্তের কাছে নিয়ে গিয়ে কিসের যেন ভ্রাণ নিচ্ছে ! তার কাছ থেকে চালাটার দূরত্ব বড় জোর বিশ হাত। শঙ্কর বুঝলে সে ভয়ানক বিপদগ্ৰস্ত। সিংহ চালার খড় খুচিয়ে গৰ্ত্ত করতে ব্যস্ত, সেখান দিয়ে ঢুকে সে মানুষ নেবে—শঙ্করকে সে এখনও দেখতে পায়নি। তাবুর বাইরে কোথাও লোক নেই, সিংহের ভয়ে বেশী রাত্রে কেউ বাইরে থাকে না। নিজে সে সম্পূর্ণ নিরস্ত্র, একগাছ লাঠি পৰ্য্যন্ত নেই হাতে। শঙ্কর নিঃশব্দে পিছু হঠতে লাগল এঞ্জিনিয়ারের তাবুর দিকে সিংহের দিকে চোখ রেখে। এক মিনিট-দু মিনিট নিজের স্বায়ুমণ্ডলীর ওপর যে তার এত কর্তৃত্ব ছিল, তা এর আগে শঙ্কর জানতো না। একটা ভীতিস্থচক শব্দ তার মুখ দিয়ে বেরুল না বা সে হঠাৎ পিছু ফিরে দৌড় দেবার চেষ্টাও করলে না। এঞ্জিনিয়ারের তাবুর পর্দা উঠিয়ে সে ঢুকে দেখল সাহেব টেবিলে বসে তখনও কাজ করছে। সাহেব ওর রকম-সকম দেখে বিস্মিত হয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করবার আগেই ও বললে—সাহেব, সিংহ!-- সাহেব লাফিয়ে উঠল—কৈ ? কোথায় ? বন্দুকের র্যাকে একটা ৩৭৫ ম্যানলিকার রাইফল ছিল—সাহেব সেটা নামিয়ে নিলে। শঙ্করকে আর একটা রাইফ ল দিলে। দুজনে তাবুর পর্দা তুলে আস্তে আস্তে বাইরে এল। একটু দূরেই কুলী লাইনের সেই গোল চালা। কিন্তু চালার ওপর কোথায় সিংহ ? শঙ্কর আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বললে—এই মাত্র দেখে গেলাম স্তার। ঐ চালার ওপর সিংহ থাবা দিয়ে খড় খোচাচ্ছে । সাহেব বললে—পালিয়েছে। জাগাও সবাইকে । একটু পরে তাবুতে মহা শোরগোল পড়ে গেল। লাঠি, সড়কি, গীতি, মুগুর নিয়ে কুলীর