বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তালনবমী ২৩৭ ধায় না— । অনেক হদিস জানতে হয়—অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তবে টাকা, বুঝলে •••এখন কি দেবে বলে। জানই তো যতীন ভদ্র বকে একটু বেশি, কিন্তু খবর যা আনে তা একদম পাকা। স্বাক, এখন আসল কথা তোমায় যা বলি বেশ মন দিয়ে শোন•••• ঘতন অতঃপর হাজারিকে কাছে বসিয়ে চুপি চুপি তার কথাটা বলে গেল। যতীনের কথায় টাকার গন্ধ পেয়ে হাজারি কান খাড়া করে এমনি একাগ্রভাবে শুনে যেতে লাগলো, ধে সত্যনারায়ণের পাচালীও লোকে অতটা মন দিয়ে শোনে না । ব্যাপারটি এই – গ্রেহাম ট্রেডিং কোম্পানীর একটা মস্ত মাল জাহাজ এস. এস. রেজুন, ডাচ ইস্ট ইণ্ডিজের কোন এক বন্দর থেকে প্রচুর মাল নিয়ে কলকাতায় আসছিলো। যতরকম মাল বোঝাই ছিল, তার মধ্যে মসলার বস্তাই সব চেয়ে বেশি। লঙ্ক, হলুদ, জিরে, তেজপাতা প্রভৃতি কত রকমের মসলা। প্রতি বস্তাটি ওজনে আড়াই মণের কম নয়। এরকম শত শত বস্তার গাদায় জাহাজখানা আগাগোড়া ঠাসা । সেই মালজাহাজখানি গঙ্গার ভেতরে ঢুকতেই ঘন কুয়াশার মধ্যে শেষ রাত্রির ভাটার মুখে গঙ্গার চোরাবালির চড়ায় ধাক খেয়ে ডুবে যায়। জাহাজ যখন সবে ডায়মণ্ড হারবার পেরিয়ে গঙ্গায় এসেচে—তখন এই ব্যাপার। পারেঙ্গ শত চেষ্টা করেও কিছুতে সামাল দিতে পারলে না। জাহাঙ্গডুবির সঙ্গে কতক লোকও জলে ডুবে মারা যায়। জাহাজের কতক মাল নষ্ট হয়ে যায় আর বাদবাকী মাল সব গঙ্গার জলে ভাসতে থাকে। মসলার বস্তাগুলো প্রায়ই ডোবে নি—বিশেষ ক্ষতিও হয় নি। দূর থেকে ঐ মসলাবস্তার গাদাগুলো ভেসে যেতে দেখে পোটকমিশনারের লোকেরা সে সব তুলে পারে টেনে নেয়। কাল সাড়ে আটটার সময় নিলাম ডেকে সেই বস্তাবন্দী মসলাগুলো বিক্ৰী করা হবে । ধড়িবাজ হাজারি বিশ্বাস যতীনের কথাবার্তা শুনে চট করে সব বুঝে নিলে। কত লোককে চরিয়ে কত পাকা ধানে মই দিয়ে তবে সে আজ এত টাকার মালিক। কথাবার্তা তখনই সব ঠিক হয়ে গেল। ষাবার সময় যতীন আবার হাজারিকে বেশ করে মনে করিয়ে দিয়ে বললে, “দেখো ভায় ! টাকা যদি পিটতে চাও তবে এ স্থযোগ কিছুতেই ছাড়া নয়। জলের দামে মাল বিকিয়ে যাচ্ছে। কাল সকাল সাড়ে আটটায় নিলেম । আমি সাতটার সময়েই এসে তোমাদের সঙ্গে দেখা করবো।” পরদিন হাজারি যতীনকে নিয়ে যথাসময়ে খিদিরপুরের দিকে রওনা হয়ে গেল। নিলামের জায়গায় পৌছুতে আর বেশি দেরি নেই, দূর থেকে কলরব শোনা যাচ্ছে। যতীন আগে আগে চলেচে—হাজারি পেছনে পেছনে ছুটচে। এতবড় সস্তার কিস্তিটা ফসকে না যায়। হাজারি যতীনকে বরাবর নিলামের কাছে বস্তাগুলো গুনতি করতে পাঠিয়ে দিয়েই নিজে সটান এক দৌড়ে সাহেবের কাছে গিয়ে মস্ত বড় এক সেলাম করলে। সাহেবের সঙ্গে দুমিনিট ফিলফাস করে কি কথাবার্তা বলে হাজারি উৰ্দ্ধশ্বাসে ছুটে এসে নিলামের ডাক বন্ধ করে দিলে।