হীরামানিক জ্বলে ছোট গ্রাম স্বন্দরপুর। একটি নদীও আছে গ্রামের উত্তর প্রাস্তে। মহকুমা থেকে বারো তের মাইল, রেল স্টেশন থেকেও সাত আট মাইল। g গ্রামের মুস্তফি বংশ এক সময়ে সমৃদ্ধিশালী জমিদার ছিলেন, এখন তাদের অবস্থা আগের মত না থাকলেও আশপাশের অনেকগুলি গ্রামের মধ্যে তারাই এখনও পর্য্যন্ত বড়লোক বলে গণ্য, যদিও ভাঙা পূজোর দালানে আগের মত জাকজমকে এখন আর পূজো হয় না-প্রকাও বাড়ীর যে মহলগুলোর ছাদ খসে পড়েছে গত বিশ ত্রিশ বছরের মধ্যে, সেগুলো মেরামত করবার পয়সা জোটে না, বাড়ীর মেয়েদের বিবাহ দিতে হয় কেরানী পাত্রদের সঙ্গে—অর্থের এতই खङिांश्च । মুশীল এই বংশের ছেলে। ম্যাট্রিক পাস করে বাড়ী বসে আছে—বড় বংশের ছেলে, তার পূৰ্ব্বপুরুষদের মধ্যে কেউ কখনো চাকুরি করেন নি, স্বতরাং বাড়ী বসেই বাপের অন্ন ধ্বংস করুক এই ছিল বাড়ীর সকলেরই প্রচ্ছন্ন অভিপ্রায় । সুশীল তাই করে আসছে অবিপ্তি । - স্বন্দরপুর গ্রামে ব্রাহ্মণ কায়স্থের বাস খুব বেশি নেই—আগে অনেক ভদ্র গৃহস্থের বাস ছিল, তাদের সবাই এখন বিদেশে চাকুরি করে—বড় বড় বাড়ী জঙ্গলাবৃত হয়ে পড়ে अiएछ् । মূস্তফিদের প্রকাও ভদ্রাসনের দক্ষিণে ও পূৰ্ব্বে তাদের দৌহিত্র রায় বংশ বাস করে। পূৰ্ব্বে যখন মুস্তফিদের সমৃদ্ধির অবস্থা ছিল তখন বিদেশ থেকে কুলগৌরব-সম্পন্ন রায়দের আনিয়ে কন্যাদান করে জমি দিয়ে এখানেই বাস করিয়েছিলেন এরা । কালের বিপৰ্য্যয়ে সেই রায় বংশের ছেলেরা এখন সুশিক্ষিত ও প্রায় সকলেই বিদেশে ভাল চাকুরি করে। নগদ টাকার মুখ দেখতে পায়—বাড়ী কেউ বড় একটা আসে না—যখন আসে তখন খুব বড়-মান্থষি চাল দেখিয়ে যায়। পদে পদে মাতুল বংশের ওপর টেকা দিয়ে চলাই যেন তাদের দু-একমাস-স্থায়ী পল্পীবাসের সর্বপ্রধান লক্ষ্য । আশ্বিন মাস। পূজোর বেশী দিন দেরি নেই। অঘোর রায়ের বড় ছেলে অবনী সন্ত্রীক বাড়ী এসেছে। শোনা যাচ্ছে, দুর্গোৎসব না করলেও অবনী এবার ধুমধামে নাকি কালী পূজো করবে। অবনী সরকারী দপ্তরে ভাল চাকুরি করে। অবনীর বাবা অঘোর রায় ছেলের কাছেই বিদেশে থাকেন। তিনি এ সময় বাড়ী আসেন নি, তার মেজ ছেলে অখিলের সঙ্গে পুরী গিয়েছেন। অখিল যেন কোথাকার সাবডেপুটি—পনেরো দিন ছুটি নিয়ে স্ত্রীপুত্র ও বৃদ্ধ পিতাকে নিয়ে বেড়াতে বার হয়েছে । স্বশীল অবনীদের বৈঠকখানায় বসে এদের চালবাজির কথা শুনছিল অনেকক্ষণ থেকে।
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৮৮
অবয়ব