পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

չե: বিভূতি-রচনাবলী সাপের চিহ্নও পাওয়া গেল না। গার্ড লোকটা ভালো—বললে, বলি তবে শোনে। খুব বেঁচে গিয়েছ কাল রাত্রে। এতদিন কথাটা তোমায় বলি নি, পাছে ভয় পাও । তোমার আগে যিনি স্টেশন মাস্টার এখানে ছিলেন—তিনিও সাপের উপদ্রবেই এখান থেকে পালান। র্তার আগে দুজন স্টেশন মাস্টার এই স্টেশনের কোয়ার্টারে সাপের কামড়ে মরেছে। আফ্রিকার ব্ল্যাক মাম্বা যেখানে থাকে, তার ত্রিসীমানায় লোক আসে না। বন্ধু ভাবে কথাটা বললাম, ওপরওয়ালাদের বলো না যেন, যে আমার কাছ থেকে এ কথা শুনেছ। ট্রান্সফারের দরখাস্ত কর । শঙ্কর বললে—দরখাস্তের উত্তর আসতেও তো দেরি হবে, তুমি একটা উপকার করো। আমি.এখানে একেবারে নিরস্ত্র, অামাকে একটা বন্দুক কি রিভলভার যাবার পথে দিয়ে যাও। আর কিছুকাৰ্ব্বলিক য়্যাসিড । ফিরবার পথেই কাৰ্ব্বলিক য়্যাসিড টা আমায় দিয়ে যেও । ট্রেন থেকে সে একটা কুলীকে নামিয়ে নিলে এবং দুজনে মিলে সারাদিন সৰ্ব্বত্র গৰ্ত্ত বুজিয়ে বেড়ালে। পরীক্ষা করে দেখে মনে হল কাল রাত্রে স্টেশন ঘরের পশ্চিমের দেওয়ালের কোণে একটা গৰ্ত্ত থেকে সাপটা বেরিয়েছিল। গৰ্ত্তগুলো ঈদুরের, বাইরের সাপ দিনমানে ইদুর খাবার লোভে গর্তে ঢুকেছিল হয়তে। গৰ্ত্তটা বেশ ভাল করে বুজিয়ে দিলে। ডাউন ট্রেনের গার্ডের কাছ থেকে এক বোতল কাৰ্ব্বলিক য়্যাসিড পাওয়া গেল—ঘরের সর্বত্র ও আশেপাশে সে য়্যাসিড, ছড়িয়ে দিলে। কুলীট তাকে একটা বড় লাঠি দিয়ে গেল। দু-তিন দিনের মধ্যে রেল কোম্পানী থেকে ওকে একটা বন্দুক দিলে। চার স্টেশনে জলের বড় কষ্ট। ট্রেন থেকে জল দেয়, তাতে রান্না-খাওয়া কোনো রকমে চলে—স্বান আর হয় না। এখানকার কুয়োর জলও শুকিয়ে গিয়েছে। একদিন সে শুনলে স্টেশন থেকে মাইল তিনেক দূরে একটা জলাশয় আছে, সেখানে ভাল জল পাওয়া যায়, মাছও আছে। স্নান ও মাছ ধরার আকর্ষণে একদিন সে সকালের ট্রেন রওনা করে দিয়ে সেখানে মাছ ধরতে চলল সঙ্গে একজন সোমালি কুলী, সে পথ দেখিয়ে নিয়ে গেল। মাছ ধরবার সাজসরঞ্জাম মোম্বাস থেকে আনিয়ে নিয়েছিল। জলাশয়ট মাঝারি গোছের, চারিধারে উচু স্বাসের বন, ইউকা গাছ, নিকটেই একটা অনুচ্চ পাহাড় । জলে সে স্নান সেরে উঠে ঘণ্টা-দুই ছিপ ফেলে ট্যাংরা জাতীয় ছোট ছোট মাছ অনেকগুলি পেলে। মাছ অদৃষ্টে জোটে নি অনেক দিন কিন্তু আর বেশী দেরি করা চলবে না - কারণ আবার বিকেল চারটের মধ্যে স্টেশনে পৌছনো চাই-বিকেলের ট্রেন পাস করাবার জন্যে। প্রায়ই সে মাঝে মাঝে মাছ ধরতে যায়, কোনো দিন সঙ্গে লোক থাকে—প্রায়ই এক যায়। স্বানের কষ্টও ঘুচেছে ।