o বিভূতি-রচনাবলী צס জামাতুল্লা বললে—লোক লেগেছে, তবে আমাদের বাসাটা এখনও বার করতে পারে নি। আমি বলি নি যে এখানে আমরা বিপন্ন। আমার না বলবার কারণ আছে । রাতে ভাচ, স্টীমার ‘বেদ’ ছাড়ল। ইয়ার হোসেন বড় বড় কেরোসিন কাঠের প্যাকবাক্স ওঠালে গোটাকতক জাহাজে—তাদের বাইরে বিলিতি বিয়ার মদের বিজ্ঞাপন মারা । ওঠাবার সময় অবিপ্তি কোন হাঙ্গামা হল না—কিন্তু স্বশীল ও সনৎএর ভয় তাতে একেবারে দূর হয় নি। সিঙ্গাপুরের বন্দর ও প্রকাও নৌ-ঘাটি ধীরে ধীরে দিকচক্রবালে মিলিয়ে গেল—অকুল জলরাশি আলোকোৎক্ষেপী ঢেউয়ে রহস্যময় হয়ে উঠেছে। চারদিনের দিন সকালে জাহাজ এসে সাঙ্গাপান পৌছল। এখানে এসে ওরা নেমে একটা চীনা হোটেলে আশ্রয় নিলে । 感 সাঙ্গাপান মশলার খুব বড় আড়ত, কতকগুলো নদী এসে সমুদ্রে পড়েছে, নদীর সেই মোহানাতেই বন্দর অবস্থিত—যেমন আমাদের দেশের চট্টগ্রাম। ইয়ার হোসেন বাংলা জানে না, উজু বা হিন্দুস্থানীও ভুলে গিয়েছে—ও জামাতুল্লার সঙ্গে কথা বলে পিজিন ইংলিশে ও মালয় ভাষায়। বললে—জামাতুল্লা, এবার তুমি তোমার সেই দ্বীপে নিয়ে যেতে পারবে তো ? —পারব বলে মনে হচ্ছে। তবে এখনও ঠিক জানি নে— স্বশীল বললে—শুনি মি: হোসেন। যখন আমার সঙ্গে জামাতুল্লার দেখা হয় গ্রামে, ও বলেছিল ডাচ ইস্ট ইণ্ডিজের একটা দ্বীপে ওর জাহাজ নারকেলের ছোবড়া ও কুচি বোঝাই করতে গিয়ে ডুবো পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে ভেঙে যায়। কেমন, তাই তো জামাতুল্লা ? রাস্তার কথাটা একবার ভাল করে ঝালিয়ে নেওয়া দরকার । —ঠিক বাবুজি— --তারপর বলে যাও— —তারপর আমরা সাতদিন সেইখানে থাকি । ইয়ার হোসেন বললে—সেখানে থাকি মানে কী বুঝিয়ে বল। দ্বীপে, নাসমূত্রে ? —না সাহেব, দ্বীপে তো নয়—আমরা যাচ্ছিলাম এক দ্বীপ থেকে আর এক দ্বীপে। মাৰদরিয়ায় এ কাও ঘটে। তারপর সৌরাবায়া থেকে জাহাজ এসে আমাদের উদ্ধার করে । —কতদিন পরে উদ্ধার করে ? —আট দশ দিন কি ওই রকম । স্বশীল বললে—আগে বলেছিল সাতদিন । —বাবু, ঠিক মনে নেই। অনেক দিনের কথা। সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে। সেই সময় সমুদ্রের বিষাক্ত কাকড়া খেয়ে সব কলের হয়ে মারা গেল—বাকি ছিলাম কাপ্তান জার আমি। দ্বীপ ছিল নিকটেই—যেখানে ডুবো পাহাড়ে আমাদের জাহাজে ধাক্কা খেয়েছিল, সেখান থেকে ভাঙা নজরে পড়ে। জাহাজের - রশির দু রশি কী তিন রশি তফাতে। দ্বীপ
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৩২৩
অবয়ব