পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চাদের পাহাড় \S)? তুমি না থাকলে ইউগাণ্ডার তৃণভূমিতে আমার হাড়গুলো সাদা হয়ে আসতো এতদিন । মাস দুই ধরে রোডেসিয়া ও এঙ্গোলীর মধ্যবর্তী বিস্তীর্ণ ভেন্ড, অতিক্রম করে, অবশেষে দূরে মেঘের মত পৰ্ব্বতশ্রেণী দেখা গেল। আলভারেজ ম্যাপ মিলিয়ে বলল—ওই হচ্ছে আমাদের গন্তব্যস্থান, রিখটারস্ভেল্ড পৰ্ব্বত, এখনও এখান থেকে চল্লিশ মাইল হবে। আফ্রিকার এই সব খোলা জায়গায় অনেক দূর থেকে জিনিস দেখা যায়। এ অঞ্চলে অনেক বাওবাব, গাছ। শঙ্করের এ গাছটা বড় ভাল লাগে—দূর থেকে যেন মনে হয় বট কি অশ্বখ গাছের মত, কিন্তু কাছে গেলে দেখা যায়, বাওবাব গাছ ছায়াবিরল অথচ বিশাল, অঁাক-বাকী সারা গায়ে যেন বড় বড় আচিল কি আব, বেরিয়েছে, যেন আরব্য উপন্যাসের একটা বেঁটে, কুদর্শন, কুক্ত দৈত্য। বিস্তীর্ণ প্রান্তরে এখানে ওখানে প্রায় সৰ্ব্বত্রই দূরে নিকটে বড় বড় বাওবাব গাছ দাড়িয়ে। একদিন সন্ধ্যাবেলার দুর্জয় শীতে তাবুর সামনে আগুন করে বসে আলভারেজ বললে— এই যে দেখছ রোডেসিয়ার ভেল্ড অঞ্চল, এখানে হীরে ছড়ানো আছে সৰ্ব্বত্র, এটা হীরের গনির দেশ। কিম্বালি খনির নাম নিশ্চয়ই শুনেছ। আরও অনেক ছোটখাটো খনি আছে, এখানে ওখানে ছোট বড় হীরের টুকরো কত লোকে পেয়েছে, এখনও পায়। কথা শেষ করেই বলে উঠল—ও কারা ? শঙ্কর সামনে বসে ওর কথা শুনছিল। বললে, কোথায় কে ? কিন্তু আলভারেজের তীক্ষদৃষ্টি তার হাতের বন্দুকের গুলির মতই অব্যর্থ, একটু পরে তাৰু থেকে দূরে অন্ধকারে কয়েকটি অস্পষ্ট মৃত্তি এদিকে এগিয়ে আসছে, শঙ্করের চোখে পড়ল। আলভারেজ বললে—শঙ্কর, বন্দুক নিয়ে এসো, চট করে যাও, টোটা ভরে— বন্দুক হাতে শঙ্কর বাইরে এসে দেখলে, আলভারেজ নিশ্চিন্ত মনে ধূমপান করছে, কিছুদূরে অজানা মূৰ্ত্তি কয়টি এখনও অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে আসছে। একটু পরে তারা এসে তাবুর অগ্নিকুণ্ডের বাইরে দাড়ালে। শঙ্কর চেয়ে দেখলে আগন্তুক কয়েকটি কৃষ্ণবর্ণ, দীর্ঘকায়, —তাদের হাতে কিছু নেই, পরনে লেংটি, গলায় সিংহের লোম, মাথায় পালক—সুগঠিত চেহারা, তাবুর আলোয় মনে হচ্ছিল যেন কয়েকটি ব্রোঞ্জের মূৰ্চি। আলভারেজ জুলু ভাষায় বললে—কি চাও তোমরা ? ওদের মধ্যে কি কথাবাৰ্ত্ত চলল, তার পরে ওরা সব মাটির ওপর বসে পড়ল। আলভারেজ বললে—শঙ্কর, ওদের খেতে দাও— তার পরে অমুচ্চস্বরে বললে—বড় বিপদ। খুব হুশিয়ার, শঙ্কর ! টিনের খাবার খোলা হল। সকলের সামনেই খাবার রাখলে শঙ্কর। আলভারেজও ওই সঙ্গে আবার খেতে বসলে, যদিও সে ও শঙ্কর সন্ধ্যার সময়েই তাদের নৈশ আহার শেষ করেছে। শঙ্কর বুঝলে আলভারেজের কোনো মতলব আছে, কিংবা এদেশের রীতি অতিথির সঙ্গে খেতে হয়। আলভারেজ খেতে খেতে জুলু ভাষায় আগন্তকদের সঙ্গে গল্প করছে, অনেকক্ষণ পরে ممچ .ft. a