বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

છે જ বিভূতি-রচনাবলী এদিন শঙ্কর স্প্রিংবকৃ হরিণের সন্ধানে গভীর বনে চলে গিয়েছে। সকালে বেরিয়েছিল, ঘুরে ঘুরে বড় ক্লাস্ত হয়ে পড়ে এক জায়গায় একটা বড় গাছের তলায় সে একটু বিশ্রামের জন্য বসল । 峻 সেখানটাতে চারিধারেই বৃহৎ বৃহৎ বনস্পতির মেলা, আর সব গাছেই গুড়ি ও ডালপালা বেয়ে একপ্রকারের বড় বড় লত। উঠে তাদের ছোট ছোট পাতা দিয়ে এমনি নিবিড় ভাবে অাষ্টেপৃষ্ঠে গাছগুলোকে জড়িয়েছে যে গুড়ির আসল রং দেখা যায় না। কাছেই একটা ছোট জলার ধারে ঝাড়ে ঝাড়ে মারিপোসা লিলি ফুটে রয়েছে। খানিকট। সেখানে বসবার পরে শঙ্করের মনে হল তার কি একটা অস্বস্তি হচ্ছে। কি ধরনের অস্বস্তি ত সে কিছু বুঝতে পারলে না—অথচ জায়গাটা ছেড়ে উঠে যাবারও ইচ্ছে হল না—সে ক্লাস্তও বটে, আর জায়গাটাও বেশ আরামেরও বটে। কিন্তু এ তার কি হল । তার সমস্ত শরীরে এত অবসাদ কোথা থেকে এল ? ম্যালেরিয়া জরে ধরল নাকি ? অবসাদটা কাটাবার জন্যে সে পকেট হাতড়ে একটা চুরুট বার করে ধরালে। কিসের একটা মিষ্টি মিষ্টি স্বগন্ধ বাতাসে—শঙ্করের বেশ ভাল লাগছে গন্ধটা। একটু পরে দেশলাইট মাটি থেকে কুড়িয়ে পকেটে রাখতে গিয়ে মনে হল, হাতটা যেন তার নিজের নেই–যেন আর কারো হাত, তার মনের ইচ্ছায় সে হাত মড়ে না। ক্রমে তার সর্বশরীর যেন বেশ একটা আরামদায়ক অবসাদে অবশ হয়ে পড়তে চাইল । কি হবে আর বৃথা ভ্রমণে, আলেয়ার পিছু পিছু বৃথা ছুটে, এই রকম বনের ঘন ছায়ায় নিভৃত লতাবিতানে অলস স্বপ্নে জীবনটা কাটিয়ে দেওয়ার চেয়ে স্থখ আর কি আছে ? একবার তার মনে হল, এই বেল উঠে তাবুতে যাওয়া যাকৃ, নতুবা তার কোনো একটা বিপদ ঘটবে যেন। একবার সে ওঠবার চেষ্টাও করতে গেল, কিন্তু পরক্ষণেই তার দেহমনব্যাপী অবসাদের জয় হল । অবসাদ নয়, যেন একটা মৃদুমধুর নেশার আনন্দ। সমস্ত জগৎ তার কাছে তুচ্ছ । সে নেশাটাই তার সারাদেহ অবশ করে আনছে ক্রমশঃ। শঙ্কর গাছের শিকড়ে মাথা দিয়ে ভাল করেই শুয়ে পড়ল। বড় বড় কটন উড় গাছের ডালে শাখায় আলোছায়ার রেখা অস্পষ্ট, কাছেই কোথাও বন্য পেচকের ধ্বনি অনেকক্ষণ থেকে শোনা যাচ্ছিল, ক্রমে যেন তা ক্ষীণ হতে ক্ষীণতর হয়ে আসছে। তারপরে কি হল শঙ্কর আর কিছু জানে না।-- আলভারেজ যখন বহু অনুসন্ধানের পর ওর অচৈতন্য দেহটা কটন উড়, জঙ্গলের ছায়ায় আবিষ্কার করলে, তখন বেলা বেশী নেই। প্রথমটা আলভারেজ মনে ভাবলে, এ নিশ্চয়ই সর্পাঘাত—কিন্তু দেহটা পরীক্ষা করে সর্পাঘাতের কোনো লক্ষণ দেখা গেল না। হঠাৎ মাথার ওপরকার ডালপালা ও চারিধারে গাছপালার দিকে নজর পড়তেই অভিজ্ঞ ভ্রমণকারী আলভারেজ ব্যাপারটা সব বুঝতে পারলে। সেখানটাতে সৰ্ব্বত্র অতি মারাত্মক বিষ-লতার বন (Poison Ivy ), যার রসে আফ্রিকার অসভ্য মানুষেরা তীরের ফলা ডুবিয়ে নেয়।