চাদের পাহাড় W)。 আমরা সে পর্বতমালা, সে মহাদুর্গম অরণ্যে গিয়েছিলাম। সে খনি বার করেছিলাম । যে নদীর তীরে হীরা পাওয় যায়, এক বিশাল ও অতি ভয়ানক গুহার মধ্যে সে নদীর উৎপত্তি স্থান। আমি সেই গুহার মধ্যে ঢুকে এবং নদীর জলের তীরে ও জলের মধ্যে পাথরের মুড়ির মত অজস্র হীরা ছড়ানো দেখতে পাই। প্রত্যেক মুড়িটি টেট্রাহেড্রন ক্রিস্ট্যাল, স্বচ্ছ ও হরিদ্রাভ ; লণ্ডন ও আমস্টার্ডামের বাজারে এমন হীরা নেই। এই অরণ্য ও পৰ্ব্বতের সে উপদেবতাকে আমি এই গুহার মধ্যে দেখেছি—ধুনোর কাঠের মশালের আলোয় দূর থেকে আবছায়া ভাবে। সত্যিই ভীষণ তার চেহারা। জলস্ত মশাল হাতে ছিল বলেই সেদিন আমার কাছে সে ঘেষে নি। এই গুহাতেই সে সম্ভবত: বাস করে। হীরার খনির সে রক্ষক, এই প্রবাদের স্বষ্টি সেই জন্যেই বোধ হয় হয়েছে। কিন্তু কি কুক্ষণেই হীরার সন্ধান পেয়েছিলাম এব’ কি কুক্ষণেই সঙ্গীদের কাছে তা প্রকাশ করেছিলাম। ওদের নিয়ে আবার যখন সে গুহায় ঢুকি, হীরার খনি খুজে পেলাম না । একে ঘোর অন্ধকার, মশালের আলোয় সে অন্ধকার দূর হয় না, তার ওপরে বহুমুখী নদী, কোন স্রোতটার ধারণ হীরার রাশির ওপর দিয়ে বইছে, কিছুতেই বার করতে পারলাম না আর । আমার সঙ্গীরা বর্বর, জাহাজের খালাসী । ভাবলে, ওদের ফাঁকি দিলাম ববি । আমি এক নেবো এই বুলি অামার মতলব । ওরা কি ষড়যন্ত্র আঁটলে জানি নে, পরদিন সন্ধ্যাবেল চারজনে মিলে অতর্কিতে চুরি খুলে আমায় আক্রমণ করলে। কিন্তু তারা জানতো না আমাকে, আক্তিলিও গাক্তিকে । আমার ধমনীতে উষ্ণ রক্ত বইছে, আমার পূর্বপুরুষ রিওলিনি কাভালকাস্তি গাত্তির—যিনি লেপাণ্টোর যুদ্ধে ওরকম বহু বৰ্ব্বরকে নরকে পাঠিয়েছিলেন। সান্ট কাটালিনার সামরিক বিদ্যালয়ে যখন আমি ছাত্র, অামাদের অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ Foncer এন্টোনিও ড়েফুসকে ছোরার ডুয়েলে জখম করি। আমার ছোরার আঘাতে ওরা দুজন মরে গেল, দুজন সাংঘাতিক ঘায়েল হল, নিজেও আমি চোট পেলাম ওদের হাতে। অহিত বদমাইশ দুটোও সেই রাত্রেই ভবলীলা শেষ করল। ভেবে দেখলাম এখন এই গুহার গোলকধাঁধাব ভেতর থেকে খনি খুজে হয়তো বার করতে পারবো না । তা ছাড়া আমি সাংঘাতিক আহত, আমায় সভ্যজগতে পৌছুতেই হবে। পূৰ্ব্বদিকের পথে ডাচ উপনিবেশে পৌছবে বলে রওনা হয়েছিলুম। কিন্তু এ পর্য্যন্ত এসে আর অগ্রসর হতে পারলুম না। ওরা তলপেটে চুরি মেরেছে, সেই ক্ষতস্থান উঠল বিষিয়ে । সেই সঙ্গে জর । মানুষের কি লোভ তাই ভাবি । কেন ওরা আমাকে মারলে ? ওরা আমার সঙ্গী, একবারও তো ওদের ফাকি দেওয়ার কথা আমার মনে আসে নি । জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ হীরকখনির মালিক আমি, কারণ নিজের প্রাণ বিপন্ন করে তা আমি আবিষ্কার করেছি। যিনি আমার এ লেখা পড়ে বুঝতে পারবেন, তিনি নিশ্চয়ই সভ্য মানুষ ও খ্রীস্টান। তার প্রতি আমার অনুরোধ, আমাকে তিনি যেন খ্রীস্টানের উপযুক্ত কবর দেন। এই অনুগ্রহের বদলে ঐ খনির স্বত্ব আমি তাকে দিলাম। রাণী শেবার ধনভাণ্ডারও এ খনির কাছে কিছু নয়। প্রাণ গেল, যাক, কি করবো? কিন্তু কি ভয়ানক মরুভূমি এ! একটা বিঝি পোকার
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৮২
অবয়ব