পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক ›ፃ¢ —ঝল্লুটোলায় এক গাঙ্গোতার বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের গোয়ালঘরের পাশে একখানা ছোট্ট চালা আছে সেখানেই থাকে। —চলে কি করে ? ওর ত দু-তিনটি ছেলেমেয়ে। —ভিক্ষে করে—ক্ষেতের ফসল কুড়োয়। কলাই গম কাটে। বড় ভাল মেয়ে বাৰু কুস্তা। বাইজীর মেয়ে ছিল বটে, কিন্তু ভাল ঘরের মেয়ের মত মন-মেজাজ—কোন অসৎ কাজ ওকে দিয়ে হবে না । জরীপ শেষ হইল। বালিয়া জেলার একটি প্রজা এই জমি বন্দোবস্ত লইয়াছে—কাল হইতে এখানে সে বাড়ী বাধিবে । গ্র্যান্ট সাহাবের বটগাছের মহিমাও ধ্বংস হইল । মহলিখারূপের পাহাড়ে উপরকার বড় বড় গাছপালার মাথায় রোদ রাঙা হইয়া আসিল । সিল্লীর দল বাঁকি বাধিয়া সরস্বতী কুণ্ডীর দিকে উড়িয়া চলিয়াছে। সন্ধ্যার আর দেরি নাই । একটা কথা ভাবিলাম । এতটুকু জমি কোথাও থাকিবে না এই বিশাল লবটুলিয়া ও নাঢ় বইহারে, যেমন দেখিতেছি। দলে দলে অপরিচিত লোক আসিয়া জমি লইয়া ফেলিল—কিন্তু এই আরণ্যভূমিতে যাহারা চিরকাল মানুষ অথচ যাহারা নিঃস্ব, হতভাগ্য—জমি বন্দোবস্ত লইবার পয়সা নাই বলিয়াই কি তাহারা বঞ্চিত থাকিবে ? যাহাঁদের ভালবাসি, তাহদের অন্তত এতটুকু উপকার করিবই। আসরফিকে বলিলাম—আসরফি, কুন্তাকে কাল সকালে কাছারিতে হাজির করতে পারবে ? ওকে একটু দরকার আছে। —ই, হুজুর, যখন বলবেন । পরদিন সকালে কুন্তালে আসরফি আমার আপিস-ঘরের সামনে বেলা ন’টার সময় লইয়া আসিল । বলিলাম— কুম্ভ, কেমন আছ ? কুস্তা আমার দুই হাত জোড় করিয়া প্রণাম করিয়া বলিল—জী হুজুর, ভাল আছি। —তোমার ছেলেমেয়েরা ? —ভাল আছে হুজুরের দোয়ার। —বড়ছেলেটি কত বড় হ’ল ? –এই আট বছরে পড়েছে, হুজুর। —মহিষ চরাতে পারে না ? —অতটুকু ছেলেকে কে মহিষ চরাতে দেবে হুজুর ? s কুন্তা সত্যই এখনও দেখিতে বেশ, ওর মুখে অসহায় জীবনের দুঃখকষ্ট যেমন ছাপ মারিয়া দিয়াছে—সাহস ও পবিত্রতাও তেমনি তাদের দুলভ জয়চিহ্ন অঙ্কিত করিয়া দিয়াছে। এই সেই কাশীর বাইজীর মেয়ে, প্রেমবিহবলা কুস্তা!-প্রেমের উজ্জল বৰ্ত্তিক এই দুঃখিনী রমণীর হাতে এখনও সগৌরবে জলিতেছে, তাই ওর এত দুঃখ-দৈগু, এত হেনস্থা, অপমান।