পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশনি-সংকেত ՀՀ չ অনঙ্গ ঠোঁট উন্টে তাচ্ছিল্যের স্বরে বললে—গাওয়া ঘি ! বলে ভাত পায় না, মুড়কি জলপান— গঙ্গাচরণ বাইরে এসে বললে—এই যে বিশ্বাস মশায়, বসিয়ে রাখলাম। কিন্তু এসব কাজ ভেবে চিস্তে করে দিতে হয়। শুনে নিন—ভালো লালপাড় শাড়ী একখানা, গাওয়া খি আধ সের—ওটা—তিন পোয়াই ধরুন। চিনি পাচপোয়, পাকাকলা একছড়া, সন্দেশ পাচপোরা, গামছা দুখান, পেতলের থালা একখানা, ঘটি একট, ধুনো একপোয়।.ও ভুলে গিয়েচি মধুপর্কের বাটি একটা, আসন একটা— বিশ্বাস মশার মন দিয়ে ফর্দ শুনে বললেন—আর সব নতুন দেবে, কিন্তু ও থালাঘাট কি নতুনই দিতে হবে ? আপনার বাড়ী থেকে না হয় দিন, কিছু দাম ধরে দিলে হয় না ? —ত হয়। তবে খুৎ না রাখাই ভালো। আপনি নতুনই দেবেন। —দিন ঠিক করে দিন— —সামনের আমাবস্তায় হবে, ও আর দিন ঠিক কি। বলেছি তো । দক্ষিণে লাগবে দুটাকা। বিশ্বাস মশায় অনুরোধের মুরে বললেন—টীকা খরচের জন্তে আপত্তি নেই—যাতে নাতিটি আমার—ঠাকুর মশাই—যাতে সেরে ওঠে— প্রণয় কাদো কাদো হয়ে উঠলেন উনি । গঙ্গাচরণ আশ্বাসের ভঙ্গিতে বললে—স্থ:, গোবধ ! বলে কত কত শক্ত কাণ্ডের জন্তে শাস্তি-স্বস্ত্যয়ন করে এলাম ! কোনো ভয় নেই, যান আপনি । অনঙ্গ স্বামীর কৃতিত্বে খুশি না হয়ে পারলো না যেদিন গঙ্গাচরণ বিশ্বাস মশায়ের বাড়ী থেকে একরাশি জিনিসপত্র লহন করে বাড়ী নিয়ে এল। একগাল হেসে বললে—দেখি শাড়ীখান ? বা, চমৎকার কস্তাপেড়ে—গাওয়া ঘি ? কতটা ? —তা আছে পাকি তিনপোয়া । -ড়িীর তৈরী খাটি ঘি। —এইবার একবার ভাতছালা বেড়িয়ে আসি, কি বলে ? —বিশ্বেস মশায়কে বলেও এসেছি। গরুর গাড়ী দেবে বলেচে—তুমি যাবে না ? —আমার কি সময় আছে যে যাবে ? ছেলে পড়াতে হবে না ? তুমি যাও ছেলেদের নিয়ে। এসময়ে টাকাও পেয়েচি দুটো। একটা থাক, একটা খরচ করে এসো। কিন্তু যাই যাই করে শীত কেটে গিয়ে ফাল্গুন মাস পড়ে গেল। তখন অনঙ্গ একদিন বিশ্বাস মশায়ের গরুর গাড়ীতে ছেলেদের নিয়ে ভাতছালা রওনা হোল । ছক্রোশ পথ গিয়ে কাটালিয়া নদী পার হতে হোল জোড়াখের নৌকোতে গরুর গাড়ীম্বন্ধ। অনঙ্গ-বেীরের বেশ মজা লাগলো এমনভাবে নদী পার হতে। ওপারে উচু ডাঙায় নদীতীরে প্রথম বসন্তে বিস্তর বেটুকুল ফুটে আছে, বাতাসে ভুর ভূর করটে আমের বউলের মিষ্ট স্ববাস, আঁকাবাকা