পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৪০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী والامb(ع খোজ নিয়েও রামরূপ সান্ন্যালের কোন হদিস মেলাতে পারলাম না । সান্ন্যালদের বাড়ীর ছেলে-ছোকরার দল তো কিছুই বলতে পারে না। ওদের এক শরিক জলপাইগুড়িতে ডাকঘরে কাজ করতেন, তিনি পেন্সন নিয়ে সেবার শীতকালে বাড়ী এলেন। কথায় কথায় তাকে একদিন প্রশ্নটা করাতে তিনি বলিলেন—দেখ, আমার ছেলেবেলায় বড় জ্যাঠামশায়ের কাছে একখানা খাতা দেখেছি, তাতে আমাদের বংশের অনেক কথা লেখা ছিল। বড় জ্যাঠামশায়ের ঐ সব শখ ছিল, অনেক কষ্ট ক’রে নানা জায়গায় হাটাইটি ক’রে বংশের কুলজী যোগাড় করতেন। তার মুখে শুনেছি চার-পাচ পুরুষ আগে আমাদেরই বংশে রামরূপ সান্ন্যাল নদীর ধারে ঐ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। রামরূপ সাধক-পুরুষ ছিলেন, বিবাহ করেছিলেন, ছেলেমেয়েও হয়েছিল—কিন্তু সংসারে তিনি বড় একটা লিপ্ত ছিলেন না। রামরূপের বড় ভাই ছিলেন রামনিধি, প্রথম যৌবনেই অবিবাহিত অবস্থায় তিনি সন্ন্যাসী হয়ে গৃহত্যাগ করেন, আর কখনও দেশে ফেরেন নি। অস্তুতঃ দেড়-শ বছর আগের কথা হবে । জিজ্ঞাসা করলুম—ঐ শিবমন্দিরটা ও-রকম মাঠের মধ্যে বেখাপ্পা জায়গায় কেন ? —ত নয়। ওখানে তখন বহুত নদী ছিল। খুব স্রোত ছিল। বড় বড় কিস্তি চলত। কোন নৌকা একবার ওই মন্দিরের নিচের ঘাটে মারা পড়ে বলে ওর নাম লা-ভাঙার •খেয়াঘাট । প্রায় চিৎকার করে বলে উঠলুম, খেয়াঘাট ? তিনি অবাক হয়ে আমার দিকে চেয়ে বললেন—হঁ্য, জ্যাঠামশায়ের মুখে শুনেছি, বাবার মুখে শুনেছি, তা ছাড়া আমাদের পুরোনো কাগজপত্রে আছে শিবমন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ল-ভাঙার খেরাঘাটের ওপর। কেন বল তো, এসব কথা তোমার জানবার কি দরকার হ’ল ? বই-টই লিখছ না কি ? ওদের কাছে কোন কথা বলি নি, কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস হ’ল এবং সে বিশ্বাস আজও আছে যে, কাশীর সেই সন্ন্যাসী রামরূপের দাদা রামনিধি নিজেই। কোন অদ্ভুত যৌগিক শক্তির বলে দেড়-শ বছর পরেও বেঁচে আছেন । বাড়ী থেকে কিছুদিন পরে আবার সাধু-সন্ন্যাসীর সন্ধানে বেরই। বীরভূমের এক গ্রামে শুনলাম সেখানকার শ্মশানে এক পাগলী থাকে, সে আসলে খুব বড় তান্ত্ৰিক সন্ন্যাসিনী। পাগলীর সঙ্গে দেখা করলাম, নদীর ধারে শ্মশানে। ছেড়া একটা কথা জড়িয়ে পড়ে আছে, যেমন ময়লা কাপড়চোপড় পরনে, তেমনই মলিন জটপাকানো চুল। আমাকে দেখেই সে গেল মহা চটে। বললে—বেরো এখান থেকে, কে বলেছে তোকে এখানে আসতে ? ওর আলুথালু বিকট মলিন চেহারা দেখে মনে যে ভাব এসেছিল, সেটাকে অতি কষ্টে চেপে বললাম—ম, আমাকে আপনার শিয় ক’রে নিন, অনেক দূর থেকে এসেছি, দয়া করুন আমার ওপর। পাগলী চেচিয়ে উঠে বললে—পালা এখান থেকে । বিপদে পড়বি— আজুল দিয়ে গ্রামের দিকে দেখিয়ে বললে—যা— নির্জন শ্মশান, ভয় হ’ল ওর মূৰ্ত্তি দেখে, কি জানি মারবে টারবে নাকি-পাগল মানুষকে