laje এই সময় বারাকপুর ছাড়াও আর একটি স্থানের সঙ্গে আঁর্তাহার নিবিড় যোগ হইয়াছিল। বৎসরের অনেকখানি সময় সেখানেই কাটিত । বিভূতিভূষণের ঘাটশীল ও গ্যালুড়ির সঙ্গে প্ৰথম যোগাযোগ ত্রিশ দশকের গোড়ার দিকে । পরে তিনি ঘাটিশীলায় একটি বাড়ি ক্রয় করেন এবং প্ৰথম স্ত্রীর স্মৃতিস্বরূপ তাহার নাম দেন “গৌরীকুজ”। ১৯৪২ সালে বারাকপুর গ্রামে সংসারী হইয়া বাস করিবার কালে বিভূতিভূষণ বৎসরের কয়েক মাস ঘাটশীলায় গিয়া অবকাশ যাপন করিতেন। প্ৰধানত পূজার প্রাকৃকালে-পূজায় কয়েকদিন পূর্বে অথবা পূজার মধ্যে ঘাটশীল গিয়া মাঘের শেষে অথবা ফান্ডনের প্রথমে দেশে ফিরিতেন। সে-সময় ঘাটশীলায় পূজাবকাশে বহু জ্ঞানী ও গুণীয় সমাবেশ ঘটিত। অনেক সাহিত্যিক বন্ধুও সেখানে আসিয়া মিলিত হইতেন। শ্ৰীযুক্ত প্রমথনাথ বিশী, অধ্যাপক বিশ্বাপতি চৌধুরী, শ্ৰীযুক্ত গজেন্দ্ৰকুমার মিত্র, শ্ৰীযুক্ত প্ৰবোধকুমার সাম্ভাল, শ্ৰীমতী বাণী রায়, শ্ৰীযুক্ত নুমথনাখ ঘোষ, নীরদােয়াজন দাশগুপ্ত প্রভৃতি প্ৰায় প্রত্যেক ছুটিতেই ঘািটশীল যাইতেন। বিভূতিভূষণ ঘাটশীল ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে নির্জনে ভ্ৰমণ কবিতে ভালোবাসিতেন। এদেলবেড়ের জঙ্গল তাহার অতি প্রিয় ভ্রমণের জায়গা ছিল। তিনি সুবর্ণরেখা নদীর ধারে ধাৱে, পাওবশীল, কাছিমাহ রাত-মোহানায় ঘূরিয়া বেড়াইতেন । ফুলডুংরি পাহাড়ের পিছনে এক শীলাসন তাহার উপাসনার প্রিয় স্থান ছিল। বাডির কাছে একটি শিলাখণ্ডও তাহার খুব প্রিয় ছিলঅনেকটা কুর্মারুতি বলিয়া তিনি উহার নাম রাখিয়াছিলেন ‘কর্মকুট” । বিভূতিভূষণেরই আগ্রহাতিশয্যে গজেন্দ্ৰকুমার মিত্র ও সুমথনাথ ঘোষ এবং তঁহার মিতা বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় (চালকীয় ) ওখানে বাড়ি কেনেন। ১৯৪২-৪৩ সাল হইতেই তিনি তঁহায় বন্ধ এবং বিহার সরকারের বন-বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মচারী শ্ৰীযুক্ত যোগেন্দ্রনাথ সিনহার সঙ্গে ছোটনাগপুর বিভাগের সিংছুম, হাজারীবাগ এবং রাঁচী ও মানভূম জেলার অরণ্য ভ্ৰমণ করেন। তিনি দুই-একবার সারান্দা বনের বিভিন্ন নিতৃত অরণ্য-আবাসে (ফিয়েস্ট রেস্ট হাউস ) সন্ত্রীকও বাস করিয়াছেন। তাহার ফলে নানা বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ হয়। সেই অভিজ্ঞতার কাহিনী তাহার ‘দিনলিপিতে এবং “বনে পাহাড়ে' ও ‘’হে অরণ্য কথা কও’ গ্রন্থে লিপিবন্ধ আছে ৷ বিভূতিভূষণের সাহিত্যিক জীবনের উন্মেষ হয়। পিতার নিকট হইতে । পিতা মহানন্দন্ম শংস্কৃত সাহিত্যে প্রগাঢ় জ্ঞান ছিল এবং তিনি কথকতা করিতেন পূর্বেই উল্লেখ কৰিয়াছি। তাহা ছাড়া তিনি কবিতাও রচনা কৱিতেন । কয়েকখানি নাটকও রচনা করিয়াছিলেন বলিয়া শোনা বায়। “পথের পাঁচালী’র হরিহর-চরিত্রে তাহার চরিত্রের অনেক ছায়া পড়িয়াছে। বিভূতিভূষণের জবানীতে লেখা মহানন্দর স্বরচিত ফুল-পরিচয়-স্বজ্ঞাপক কবিতা এখানে তুলিয়া দেওয়া হইল : “কুল পরিচয়” ‘কুল পরিচয় মম শুন সৰ্ব্বজন । রাঢ়ীয় ব্ৰাহ্মণ হুই ব্ৰহ্ম-পরায়ণ ॥
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).djvu/১১
অবয়ব