পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/১৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

> বিপিন সকালে উঠিয়া কলাই-চটা পেয়ালাটায় সবে এক পেয়ালা চা লইয়া বসিয়াছে, এমন সময়ে দেখা গেল তেঁতুলতলার পথে লাঠিহাতে লম্বী চেহারার কে যেন হন হন করিয়া উহাম্বের বাড়ীর দিকেই চলিয়া আসিতেছে । ৰিপিনের স্ত্রী মনোরম ঘয়ের মধ্যে চুৰিয়া বলিল, দেখ তো কে একটা মিন্সে এদিকে আসছে ! বিপিন বলিল, জমিদার-বাড়ীর দরওয়ান গো—আমি বুঝতে পেরেছি—ডাকের ওপর ডাক, চিঠি দিয়ে ডাক, আবার লোক পাঠিয়ে ডাক । মনোরম বলিল, তা এসেছ তো ধর আজ দিন কুডি। ডাক দেওয়ার আর দোষ কি ? বিপিনের বড় ভ্রাতৃবধু এই সময় ঘরে ঢুকিয়া বলিলেন, পলাশপুর থেকে বোধ হয় লোক আসছে—এগিয়ে যাও তো ঠাকুরপো । বিপিন বিরক্তমূখে চায়ের পেয়ালাটায় চুমুক দিয়া ঘর হইতে বাহির হইয়া উঠানে গিয়া দাড়াইল এবং আগন্ধক লোকটির সঙ্গে দুই একটি কথা বলিয়া তাহাকে বিদায় দিয়া একখানি চিঠি-হাতে সোজা রান্নাঘরে গিয়া মাকে বলিল, এই দেখ মা, ওরা আবার চিঠি লিখেছে— ছুদিন যে জিরোব তার উপায় নেই । বিপিনের মা বলিলেন, তা তো এয়েছ বাপু, কুড়ি-বাইশ দিন কি তার বেশি। তাদের কাজের স্থবিধের জন্থেই তো তোমায় রেখেছে ? এখানে তুমি বসে থাকলে তাদের চলে ? সকলের মুখেই ওই এক কথা । যেমনই মা, তেমনই স্ত্রী। কাহারও নিকটে একটু সহাস্থভূতি পাইবার উপায় নাট। কেবল যাও—যাও শৰ, টাকা রোজগার করিতে পারসবাই খুশি । তোমার স্বখ-দুঃখ কেহই দেখিবে না। বিরক্তির মাথায় বিপিন স্ত্রীকে বলিল, আর একটু চা দাও জিকি ৷ মনোরম বলিল, চা আর হবে কি দিয়ে ? দুধ বা ছিল সবটুকু দিয়ে দিলাম । বিপিন বলিল, র চা খাব। তাই করে দাও । —fচনিও তো নেই, র চা-ই বা কেমন ক’রে থাবে ? —মাকে বল, ওঁর গুড়ের নাগরি থেকে একটু গুড় বের করে দিতে—তাই দিয়ে কর । মনোরম বাঝের সঙ্গে বলিল, মাকে তুমি বল গিয়ে। বুড়ো মাহুৰ ; দশমী আছে, দোয়াদশী আছে—ঐ তো একখানা গুড়ের নাগরি, তাও চা খেয়ে খেয়ে জান্ধেক খালি হয়ে গিয়েছে। এখনও তিন মাস চললে তবে নতুন গুড় উঠৰে—ওর চলবে কিসে? এদিকে তে নতুন এক নাগরি আখের গুড় কিনে দেবার কড়ি জুটবে না সংসারে । মায়ের কাছ থেকে রোজ রোজ গুড় চাইতে লজা করে না ?