পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ৰিপিনের সংসার VELO ভাঙিল। শান্তি চা লইয়া আসিল, সে সম্ভ স্বান করিয়াছে, পিঠের উপর ভিজা চুলটি এলানো, মুখে চোখে রাত্ৰিজাগরণের কোনো চিহ্ন নাই। হাসিমুখে বলিল—উঃ, এত বেলা পৰ্যন্ত ঘুম ? কতক্ষণ থেকে থেকে শেষে ওকে বললুম ডেকে দিতে । অদ্ভুত মেয়ে বটে শাস্তি। বিপিনের মন দুঃখ, সহায়ভূতি ও স্নেহে পূর্ণ হইয়া গেল। সে বুঝিয়া ফেলিয়াছে অর্ধেক কথা । শাস্তিকে আর সে দেখা দিবে না। এইবারই শেষ । মানী বুদ্ধিমতী মেয়ে, সে ঠিকই বলিয়াছিল। ভাক্তারি চলুক না চলুক, সোনাতনপুরের নিকট হইতে তাহাকে চিরবিদায় গ্রহণ করিতে হইবে। হয় ধোপাখালি, নয় যে কোন স্থানে–কিন্তু সোনাতনপুরে বা পিপলিপাড়ায় আর নয়। মানীর কথা সে অক্ষরে অক্ষরে পালন করিবে । পরদিন দুপুরের পর সকলে দুইখানি গরুর গাড়ীতে করিয়া, রাণাঘাট হইতে রওনা হইয়া গ্রামের দিকে ফিরিল। কাপালপুরের মধ্য দিয়া পূৰ্ব্ব দিকে তাহাদের নিজেদের গ্রামের পথ বাহির হইয়া গিয়াছে—রাণাঘাট হইতে ক্রোশ চার পাঁচ দূরে। এই পৰ্য্যস্ত আসিয়া বিপিন বলিল—আপনারা যান তবে, আমি অনেকদিন বাড়ী যাই নি, একবার বাড়ী হয়ে যাব । সামান্ত পথ, হেঁটে যাবো। শাস্তি বলিল—কেন ডাক্তারবাৰু? আমাদের ওখানে আম্বন আজ। তারপর না হয় কাল বাড়ী আসবেন ? বিপিন রাজি হইল না। বাড়ীর সংবাদ না পাইয়া মন খারাপ আছে, বাড়ী যাইতে হইবেই। বিপিন বুঝিল, শাস্তি ভূঃখিত হইল। কিন্তু উপায় নাই, শাস্তিকে বড় দুঃখ হইতে বঁাচাইবার জন্ত এ দুঃখ তাহাকে দিতে হইবেই যে ! শাস্তি গাড়ী হইতে নামিয়া বিপিনকে প্রণাম করিল, গোপালও করিল—উহাদের বংশের নিয়ম, ব্রাহ্মণের উপর যথেষ্ট ভক্তি চিরদিন। একটা বড় পুম্পিত শিমুলগাছতলায় গাড়ী দাড়াইয়া আছে, শান্তি গাছের গুড়ির কাছে দাড়াইয়া একদৃষ্টি তাহার দিকে চাহিয়া আছে, গোপাল বৃদ্ধ বাপের হাত ধরিয়া নামাইয়া বিপিনের পরিত্যক্ত গাড়ীখানায় উঠাইতেছে—ইহাদের সম্বন্ধে বিশেষত শাস্তির সম্বন্ধে এই ছবিই বিপিনের স্মৃতিপটের বড় উজ্জল, বড় স্পষ্ট, বড় করুণ ছবি। সেইজন্য ছবিটা অনেকদিন তাহার মনে ছিল ।