পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আদর্শ হিন্দু-হোটেল S তবু সে কেন ভাবে রোজ এ-সব কথা, এই চুণা নদীর ধারে বসিয়া ? ভাবিতে বেশ লাগে, তাই ভাবে । তবে বয়স হইয়াছে বলিয়া দমিবার পাত্র সে নয়। ছে’চল্লিশ বছর এমন কিছু বয়স নয় । এখনও সে অনেকদিন বঁাচিবে । কাজে উৎসাহ তাহার আছে, হোটেল খুলিতে পারিলে সে দেখাইয়া দিবে কি করিয়া স্বনাম করিতে পারা যায়। ছোটেল খুলিয়া মরিয়া গেলেও তাহার দুঃখ নাই । সময় হইয়া গেল। আর বেশীক্ষণ বসিয়া থাকা চলিবে না। পদ্ম বি এতক্ষণ উকুনে আঁচ দিয়াছে, দেরি করিয়া গেলে তাহার মুখনাড়া খাইতে হইবে। আর কি লাগানি-ভাঙানি । কর্তার কাছে লাগাইয়াছে সে নাকি গাজা খায়—অথচ সে গাজা ছোয় না কস্মিনকালে । ফিরিবার পথে ছোট বাজারে রাধাবল্লভ-তলা । হাজারি ঠাকুর প্রতিদিন এখানে এই সময়ে ভক্তিভরে প্রণাম করিয়া যায়। —বাবা রাধাবল্লভ, তোমার চরণে পড়ে আছি ঠাকুর । মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করে । পদ্ম বির বাটা খেতে আর পারি নে। ওই কৰ্ত্তীবাবুর হোটেলের পাশে পদ্ম বিকে দেখিয়ে দেখিয়ে যেন হোটেল খুলতে পারি। হোটেলে ফিরিয়া দেখিল রতন ঠাকুর এখনও আসে নাই, পদ্ম বিী উকুনে আঁচ দিয়া কোথায় গিয়াছে। বেচু চক্কত্তি দিবানিদ্রা হইতে উঠিয়া বাসা হইতে ফিরিয়াই হাজারিকে ডাক দিলেন। —শোনো। আজ আমাদের এখানে ক’জন বাবু মাংস খাবেন, ফিষ্টি করবেন, তারা আমায় আগাম দামও দিয়ে গেলেন । ধাতে সকাল সকাল চুকে যায় তার ব্যবস্থা করবে। ওঁর মুর্শিদাবাদের গাড়ীতে আবার চলে যাবেন । মনে থাকবে তো? রতন এখনও আসে নি ? হাজারির দুঃখ হইল, বেচু চক্কত্তি একথা তাহাকে কেন বলিল না যে, তাহার হাতের রায় খুব ভাল, অতএব সে যেন নিজেই মাংস রাধে । কখনো ইহারা তাহার রান্না ভাল বলে না সে জানে। অথচ এই রান্না শিখিতে সে কি পরিশ্রমই না করিয়াছে ! রাক্স কি করিয়া ভাল শিথিল, সে এক ইতিহাস । হাজারির মনে আছে, তাহাদের এড়োশোলা গ্রামে একজন সেকালের প্রাচীন ব্রাহ্মণ বিধবা থাকিতেন, তখন হাজারির বয়স নয়-দশ বছর । রাস্নায় তার শুধু সাধারণ ধরণের মুখ্যাতি নয়, অসাধারণ স্বনামও ছিল। গ্রামেরও বাহিরেও অনেক জায়গায় লোকে উীর নাম জানিত । হাজারির মা তাকে বলিল—খুড়ীমা, আপনার তো বয়েস হয়েছে, কবে চলে যাবেন— আপনার গুণ আমাকে দিয়ে যান । চিরকাল আপনার নাম করবো । তিনি বলেন–আচ্ছা তোকে বেী একটা জিনিস দিয়ে যাবো । কি ক’রে নিরিমিষ চচ্চডি রাধতে হয় সেটাই তোকে দিয়ে যাবো ।