পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/১৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী করট ও ফিঙে পাখী গ্রীষ্মের দীর্ঘ দিন ধরিয়া বঁাশঝাড়ে ডাকে, প্রস্ফুটিত ভূতপুষ্পের ঘন জবাসে বন্ধুবাবুর জানালার বাহিরের বাতাস ভরপুর, রোগগ্ৰস্ত যন্ধুবাবু নিজের বিছানায় বালিশ ঠেসান দিয়া বসিয়া বসিয়া শোনেন। সামনের নারিকেল গাছের গায়ে একটা গিরগিটি, যখনই যন্থবাৰু চাহিয়া দেখেন, সেই গিরগিটি ওই গাছের গায়ে একই জায়গায়। দেখিয়া দেখিয়া রুগ্ন উল্লান্ত বহুবাবুর মনে হয়, ওই গিরগিটি তাহার এই বর্তমান শয্যাশায়ী অবস্থার প্রতীক। ওটাও যেমন নারিকেল গাছের গায়ে অচল অনড়, তিনিও তেমনিই এই আলোআনন্দহীন কক্ষে, পুরানো ভাঙা কোঠার কেমন একপ্রকার নোনা-ধরা গন্ধের মধ্যে শয্যাগত, উখানশক্তিরহিত । কবে শরীর সারিবে কে জানে ? যেদিন ওই গিরগিটিটা ওখান হইতে সরিয়া যাইবে ? অবনীর বড় ছেলে কালীকে ডাকিয়া বলিলেন, এই শোন, ওই গিরগিটিটাকে ওখান থেকে তাড়াতে পারবি ? বালক অবাকৃ হইয় তাহার মুখের দিকে চাহিয়া বলিল, কেন জ্যাঠামশাই ? —একটা কঞ্চি নিয়ে আসি জ্যাঠামশায়। খোচা দিয়ে তাড়াই। আপনি উঠবেন না, শুয়ে শুয়ে দেখুন। তাড়ানো হইল বটে, কিন্তু আবার পরদিন সকালে উঠিয়া যদুবাবু সভয়ে চাহিয়া দেখিলেন, গিরগিটিটা আবার সেই নারিকেলগাছের গায়ে স্বস্থানে জাকিয়া বসিয়া আছে। যন্থবাৰু হতাশ হইয়া বালিশের গায়ে ঠেস দিয়া দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিলেন। অস্বথ সারে না। দিন দিন দুর্বল হইয়া আসিতেছে দেহ, পাড়াগায়ের হাতুড়ে ডাক্তারের ওষুধে ফল হয় না। জ্যৈষ্ঠ মাস গিয়া আষাঢ় মাস পড়িল। বর্ষার জলের সঙ্গে সঙ্গে ছ ছ করিয়া মশককুল দেখা দিল ফুট-ছাঁদ দিয়া জল পড়িতে লাগিল রোগীর বিছানায়, এক-এক দিন রাত্রে বিছানা গুটাইয়া ঘরের কোণে জড়সড় হইয়া স্বামী-স্ত্রীতে রাত কাটাইতে হয়। যদুবাবুর স্ত্রী বলে, কপালে এতও ছিল । যন্থবাৰু চটিয়া বলেন, তুমি ও-রকম নাকে কেঁদো না বলে দিচ্ছি। কথায় বলে, পুরুষের দশ দশ। রেখেছিলাম তে কলকাতায় বাস করে এতাবৎ কাল। জাপানীদের তো আমি ডেকে আনি নি। পড়ে গিয়েছি বিপদে, তা এখন কী করি বল ? স্বদিন আসে, কলকাতায় গিয়ে উঠব আবার—ত বলে নাকে কেঁদে কী হবে ? বছবাবুর খ্ৰী বলিল, আমার জন্তে কিছু বলিনি,তোমার জন্যেই বলি। তোমার কি এত কষ্টকর। অভোগ অাছে কখনও । চিরকাল টুইশানি করে এসেছ, শীতকালে গরম জল করে দিয়েছি হাত-পা ধুতে, তোমার ঠাও সন্ধি হয় না কোন কালে—