পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/২৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নবাগত २९* কতদূর আশ্চর্য্যের কথা, কতদূর বিস্ময়ের কথা, ভাবলে অবাক হয়ে যেতে হয়। অথচ তারই ক্ষুদ্র জীবনে এমন একটা মহাশ্চৰ্য্য ব্যাপার সম্ভব হল ! যখনই সে এ কথাটা ভাবে তখনই সে মৃদ্ধ, তার মন মুদ্ধ, যেন কতদূরে কোথায় চলে যায়। ঐ ভদ্রলোকের একটি মাত্র ছেলে, নাম সুবোধ, তারই সঙ্গে ওর বিয়ের সম্বন্ধ হয়েচে । স্ববোধকে এই সম্বন্ধের আগে তাদের বাড়ীতে কয়েকবার যাতায়াত করতে দেখেচে—বেশ ফর্সা, লম্বামত মুখ, এবার ম্যাট্রিক দিয়েচে, এখনও পরীক্ষার ফল বার হয় নি। আগে আগে, সত্যি কথা বলতে গেলে, স্ববোধের মুখ পুটি তত পছন্দ করতে না। তার দাদার সঙ্গে যতবার এসেচে তাদের বাড়ীতে—পুটি ভাবতো—দেখো না ঘোড়ার মত মুখখান। কিন্তু আজকাল আর স্ববোধের মুখ ঘোড়ার মত ত মনে হয়ই না, মনে হয় বেশ চমৎকার মুখ । গ্রামের ছেলেদের মধ্যে অমন চোখ, অমন রং, অমন মুখের গড়ন কার আছে ? রায়েদের পাচি সেদিন বলেছিল তাকে—হ্যারে, তুই যে বড় ঘোড়ামুখো বলতিস, তোর অদেষ্টে শেষকালে কিনা সেই ঘোড়ামুখোই জুটল ! পুটি মারতে ছুটে গিয়েছিল তার পিছু পিছু। পুটির বাবা গোলার দোরে দাড়িয়ে ধান পাড়বার ব্যবস্থা করচে । তার বাবা বেশ চাষীবাসী গেরস্ত। পুটিদের বাড়ীতে চারটা বড় বড় ধানের আউড়ি আছে, গোলা আছে একট। আউড়ি জিনিসটা গোলার চেয়ে অনেক ছোট, তিন চার বিশ ধান ধরে—আর একটা গোলায় ধরে এক পৌটি অর্থাৎ ষোলো বিশ ধান । তাদেরও ধান আছে গোলা ভক্তি, সব ক’টা আউড়ি ভত্তি। কলকাতায় চাকুরী করেন এ পাড়ার হরিকাকা, তিনি মাঝে মাঝে গায়ে এসে পুটির বাবাকে বলেন—আর কি রায় মশায়, এ বাজারে ত আপনিই রাজা । গোলা ভত্তি ধান রেখেচেন ঘরে, আপনার মহড়া নেয় কে ? কলকাতায় ‘কিউ’তে দাড়িয়ে এক সের চাল নিতে হচ্চে—আর আপনি— । পুটি জিগ্যেস করেছিল—কিসে দাড়িয়ে চাল নিতে হয় বাবা, বলছিল হরিকাক ? —কে জানে কিসে দাড়িয়ে, তুই নিজের কাজ কর, আমি নিজের করি—মিটে গেল। —তুমি জান না বুঝি ও কথাটার মানে ? না বাবা ? • —না জেনেও ত পায়ের ওপর পা দিয়ে এ বাজারে চালিয়ে দিলাম মা । কলকাতার মুখ না দেখেও ত বেশ যাচ্চে । কলকাতায় নাকি মানুষের এক সের চালের জন্যে চার ঘণ্টা কোথায় নাকি দাড়িয়ে থাকতে হয়—কি যে বাড়ীতে তার বিয়ে হচ্ছে, তাদের অবস্থা এত ভালো নয়। স্ববোধ যদি পাশ করে, তবে হরিকাক ভরসা দিয়েচেন কলকাতায় নিয়ে গিয়ে তাকে ওঁর জাপিসে চাকুরী ক’রে দেবেন। তা হ’লে তাকেও কি কলকাতায় গিয়ে বাসায় থাকতে হবে জার সেই কিসে দাড়িয়ে রোজ এক সের চাল নিয়ে এসে রাঁধতে হবে ? সে বড় কষ্ট—তবে, মানে স্ববোধ যদি সঙ্গে থাকে, সে বোধ হয় সব রকম কষ্টই করতে প্রস্তুত আছে। ھه. তাদের ধানের গোল থেকে ধান পাড়া হচ্চে, খাব রাপোতা থেকে সীতানাথ কলু