পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাখিবার জন্য সাধারণ মাস্টারদের সঙ্গে খাইতে বসেন না। মাস্টারেরা বরং খোশামোদ করিয়া প্রতিবার ভোজসভাতেই তাহাকে খাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করিত। মিঃ আলম হাসিমুখে প্রত্যাখ্যান করিতেন। আজ র্তাহার প্রাপ্য সেই আপ্যায়ন নতুন টীচারের উপর গিয়া পড়িতে দেখিয় মিঃ আলম মনে মনে ক্ষুন্ন হইলেন, বিক্ষিত হইলেন, নতুন টাচারের উপর হিংসায় মন পরিপূর্ণ হইল। নতুন টীচার বলিলেন, মিঃ আলম, আপনি খেলেন না ? আহন। মি: আলম গম্ভীরমুখে উত্তর দিলেন, না, আপনার খান। আমি এখন খাই নে। নতুন টীচার আর কোন কথা বলিলেন না। মাসে এই একদিন করিয়া স্কুলের খরচে খাওয়া—এমন বেশী কিছু খাওয়া নয়, হয়তো খান পাঁচ-ছয় লুচি, দুইটি রসগোল্লা, একটু তরকারি, এক মুঠ বোদে। এই খাওয়াটুকুর জন্য মাস্টারের মাসের শেষ দিনটির প্রতীক্ষায় থাকেন, সে দিন সার। দিনট। খাটিবার পর সন্ধ্যায় সকলে বসিয়া একটু খাওয়াদাওয়া— পরদিন মিঃ আলম হেডমাস্টারকে গিয়া বলিলেন, স্যার, একটা কথা—মাসের শেষে মাস্টারদের পিছনে পাচ টাকা ছ টাকা মিথ্যে খরচ, ও বন্ধ করে দেওয়াই ভাল। ধরুন, কমিটী থেকে আপত্তি তুলতে পারে। মাস্টারদের ডিউটি তারা করবে, তার জন্যে খাওয়ানো কেন স্কুলের খরচে ? আমি তো ভাল বুঝছি নে স্তার। কমিটীর নামে হেডমাস্টার একটু ভয় পাইয়া গেলেন। তবুও বলিলেন, তা খায় খাকগে। খাটতেও হয় তো । মিঃ আলম জানিত, কমিটীর নামে সাহেব একটু ভয় পায়। সে গিয়া কমিটীর একজন মেম্বারকে কথাটা লাগাইল। কমিটীর মাটিংয়ে অমূল্যবাবু সাহেবকে প্রশ্ন করিলেন, আচ্ছ, শুনলাম আপনি টীচারদের জলখাবার খেতে দেন মাসের শেষে, সে কার পয়সায় ? —স্কুলের খরচে । —কেন ? - —মাস্টারদের খাটুনি বেশী হয়—প্রোগ্রেস-রিপোর্ট লেখা, রেজিস্টার ঠিক করা—এ তো তাদের ডিউটি। এর জন্যে জলখাবার দেওয়া কেন ? কার্কওয়েল তর্ক করিয়া তখনকার মতো নিজের কাজের যৌক্তিকতা প্রতিপন্ন করিতে চেষ্টা করিলেন বটে, কিন্তু পরের মাস হইতে মাস্টারদের জলযোগ বন্ধ হইয়া গেল। ক্ষেত্রবাবু মেদিন স্কুল হইতে বাড়ী ফিরিয়া দেখিলেন, স্বী বিছানায় গুইয়া আছে, ভয়ানক জর। এটো বাসন রান্নাঘরের এক পাশে জড়ো হইয়া আছে—ওবেলাকার এটো পরিষ্কার করা হয় নাই, ছেলেমেয়েগুলো ঘরময় দাপালাপি করিয়া বেড়াইতেছে, চারিদিকে বিশৃঙ্খলা। ক্ষেত্রবাবুর মাথা ঘুরিয়া গেল। সারাদিন পরে আসিয়। এ সব কি সন্ধ হয় । এর ব্যবস্থামত