RS बिब्रांज-रो কিছুতেই কথা শুনলে না। নগদ যা ছিল গেল, আমার গায়ের গহনাগুলো গেল, যদু মোড়লের দরুণ ডাঙ্গাটা বাধা পড়ল, দুখানা বাগান বিক্রি করলে, তার উপর এই দু’সন অজন্ম। বল আমাকে, কি ক’রে তুমি জামায়ের পড়ার খরচ মাসে মাসে যোগাবে ? একটা কিছু হলেই পুটিকে খোঁটা সইতে হবে।-সে। আমার অভিমানী মেয়ে, কিছুতেই তোমার নিন্দে শুনতে পান্থবে না-শেষে কি হ’তে কি হবে, ভগবান জানেন-কেন তুমি এমন কাজ কয়লে ? নীলাম্বর মৌন হইয়া রহিল। বিরাজ বলিল, তা ছাড়া পুটির ভাল কম্বতে গিয়ে দিনরাত ভেবে ভেবে শেষে তুমি কি আমার সর্বনাশ করবে, সে হবে না। তার চেয়ে এক কাজ কর, দু’-পাচ বিঘে জমি বিক্ৰি ক’রে শ-পাঁচেক টাকা যোগাড় ক’রে গলায় কাপড় দিয়ে জামায়ের ব্যাপকে বল গে, এই নিয়ে আমাদের রেহাই দিন মশাই, আমরা গরীব, আর পারব না ! এতে ভাল-মন্দ পুটির অদৃষ্ট যা হয় হোক। তথাপি নীলাম্বর মৌন হইয়া রহিল। বিরাজ মুখের পানে চাহিয়া থাকিয়া বলিল, পারবে না বলতে ? নীলাম্বর একটা নিশ্বাস ফেলিয়া বলিল, পারি, কিন্তু সবই যদি বিক্রি ক’রে ফেলি বিরাজ, আমাদের হবে কি ? বিরাজ বলিল, হবে। আবার কি! বিষয় বাধা দিয়ে মহাজনের সুন্দ আর মুখনাড়া সহ করার চেয়ে এ ঢের ভাল । আমার একটা ছেলেপিলে নেই যে, তার জন্যে ভাবনা-আমরা দু’টো প্রাণীযেমন ক’রে হােক চলে যাবেই। নিতান্ত না চলে, তুমি বোষ্টমঠাকুর ত আছই, আমি না হয় বোষ্টমী হয়ে পড়ব-দুজনে কাশী বৃন্দাবন ক’রে বেড়াবা । নীলাম্বর একটুখানি হাসিয়া বলিল, তুই কি করবি, মন্দিরা বাজবি ।
পাতা:বিরাজবৌ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২১
অবয়ব