পাতা:বিলাতযাত্রী সন্ন্যাসীর চিঠি - ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়.pdf/১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০
বিলাত-যাত্রা

বলিল যে ট্রাম আর যাইবে না। নামিয়া দেখি যে এক প্রকাণ্ড দেবালয় বা গির্জ্জার সম্মুখে এসে পড়েছি। দলে দলে নর নারী বালক বৃদ্ধ ধনী দরিদ্র―কেহ বা বাহির হোয়ে আস্‌ছে কেহ বা ভিতরে যাচ্ছে। এই দেবালয় এত বড় যে ইহার মধ্যে ও প্রাঙ্গণে ষাট হাজার লোক ধরে। দেখিলে মনে হয় যে ইহা বিশ্বকর্ম্মা নিজ হাতে নির্ম্মাণ করেছেন। ভিতরে যাহা দেখিলাম তাহা আমার সাধ্য নয় বর্ণন করা। বর্ণনা করিতে যাওয়া কেবল চক্ষু কর্ণে ঝগড়া বাধিয়ে দেওয়া। মণিমুক্তা প্রবালাদি নাই কিন্তু দেবালয়টি রজতশুভ্র মর্ম্মরের হাস্যকৌমুদীতে যেন বিধৌত হইয়া বিরাজ করিতেছে। কত শত সাধু সাধ্বী মহাজনের (Christian Saints) মূর্ত্তি ও চিত্র স্থানটীকে সজীব করিয়া তুলিয়াছে। ইতালী দেশে পাঁচ সাত শত বর্ষ আগে মহা মহা শিল্পী ও চিত্রকর জন্মিয়াছিলেন। এখনও ইতালীর শিল্প ও চিত্রণবিদ্যা জগতে অতুলনীয়। এই চিত্রকরেরা দেবালয়ের দেওয়ালে ভিতরে বাহিরে ছবি আঁকিতেন। জগতে যত চিত্র আছে তন্মধ্যে রাফেয়েল নামক এক দৈবশক্তিসম্পন্ন চিত্রকরের দ্বারা চিত্রিত মাতৃমূর্ত্তি না কি সৌন্দর্য্যে ও ভাবুকতায় শ্রেষ্ঠ। কাস্থলিক (Catholic) খ্রীষ্টানেরা মাতৃমূর্ত্তির বড় ভক্ত। মাতা মেরী (Mary) বালক জীশুকে কোলে করিয়া দণ্ডায়মানা। ইহাকেই মাতৃমূর্ত্তি (Madonna) বলে।

 চিত্রকর মায়ের মুখে এক অপূর্ব্ব করুণরস ঢালিয়া দিয়াছেন। খ্রীষ্টীয় শাস্ত্রে বলে যে মা আগেই জানিতে পারিয়াছিলেন যে তাঁহার পুত্র অকালে নিহত হইবেন। তাই সুতস্পর্শজনিত আনন্দ বিচ্ছেদ-বিষাদে সংমিশ্রিত। মিলনানন্দের ভাগীরথী যেন ভারি বিরহশোকের কালিন্দীর সহিত মিলিয়া মায়ের চোখের আর্দ্রকরুণভাব গড়িয়াছে। এমন মঙ্গলময়ী মুর্ত্তি অতি বিরল। আজকাল য়ুরোপের ছবি আকিবার ঢং বদলিয়া