পাতা:বিশ্বকোষ ঊনবিংশ খণ্ড.djvu/৫১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বাম বাতঞ্জ লক্ষণ-ৰাতজ বমনে হৃদয় ও পাশ্বদেশে বেদনা, মুখশোষ, মস্তক ও নাভিস্থলে শূলবেদনার স্তায় বেদনা, কাস, স্বরভেদ, অঙ্গে স্বচীবেধবং বেদন, এবং অতি কষ্টের সহিত অতিমাত্র বেগ, প্রবল উদগার, ও অতিশয় শব্দের সহিত ফেনমিশ্ৰিত বিচ্ছিন্ন ( থামিয়া থামিয়া ) পাতল ও কষায় রসবিশিষ্ট বস্তু বমন, এই সকল লক্ষণ প্রকাশিত হয়। পিত্ত্বজ লক্ষণ-পিত্তজ বমনরোগে মূৰ্ছ, পিপাসা, মুখশোষ, মস্তক, তালু ও চক্ষুদ্ধয়ে সন্তাপ, অন্ধকার দর্শন, এবং পীত, হরিৎ, বা ধূম্ৰবৰ্ণযুক্ত, ঈষৎ তিক্ত, অতি উষ্ণ পদার্থের বমন, ও বমন সময়ে কণ্ঠদেশে জালা, এই সকল লক্ষণ উপস্থিত হয়। কফজ লক্ষণ-কফজ বমনরোগে মুখ মধুর রসবিশিষ্ট, কফম্রাব, ভোজনে অনিচ্ছা, নিদ্রা, অরুচি, দেহের গুরুত, স্নিগ্ধ, ধন, মধুর রসন্মুক্ত ও শ্বেতবর্ণ পদার্থ বমন এবং বমনকালে শরীরে রোমাঞ্চ ও অতিশয় যন্ত্রণা হইয়া থাকে। সন্ধিপাতজ লক্ষণ—সন্নিপাতঞ্জ বমনরোগে শূল, অজীর্ণ, দাহ, পিপাস, শ্বাস, মুছা এবং লবণ রসযুক্ত উষ্ণ, নীল বা লোহিত বর্ণের ঘন পদার্থ বমন প্রভৃতি লক্ষণসমূহ প্রকাশিত হয়। আগস্তুজ বমন-কুৎসিত দ্রব্য ভোজন ও কোনরূপ ঘৃণাজনক বস্তুর আঘ্ৰাণ বা দর্শনাদি কারণে যে বমন উপস্থিত হয়, অথবা স্ত্রীদিগের গর্ভাবস্থায় যে বমি হয়, কৃমিরোগ বা আমরসের জন্য যে বমি হইয়া থাকে, তাহাকে আগন্তুজ বমি কহে। এই বমনরোগে বাতদি দোষ ত্ৰয়ের মধ্যে যে দোষের লক্ষণ অধিক প্রকাশিত হয়, তদনুসারে তাহাকে সেই দোষজ বমনরোগ বলিয়া স্থির করিতে হইবে। কেবল মাত্র কৃমিজন্য বমনরোগে অত্যন্ত বেদনা, অধিক বমনরোগ এবং কৃমিজ হৃদ্রোগের কতিপয় লক্ষণ প্রকাশ পায়। আগন্তুজ বমনের কারণ পাঁচটা বলিয়া ইহাও পাচ প্রকার, যথা—অসাত্মজ, কৃমিজ, আমজ, বীভৎসজ ও দৌহৃদজ। এই আগন্তুজ বমনে বাতজাদি দোষের লক্ষণ অনুসারে ইহারও বাতজাদি কারণ স্থির করিতে হইবে। এই রোগের উপদ্রব—কাস, তমক শ্বাস, জ্বর, পিপাসা, হিক, বিকৃতচিত্ততা, হৃদ্রোগ এবং অন্ধকারে প্রবিষ্টবং বোধ । বমনরোগের সাধ্যসাধ্যতা—বমনরোগে যদি কুপিত বায়ু, মল, মূত্র, স্বেদ ও জলবাহী স্রোতঃসমূহকে রুদ্ধ করিয়া উৰ্দ্ধগত হয় এবং তজ্জন্য যদি রোগীর কোষ্ঠ হইতে পূৰ্ব্ব সঞ্চিত পিত্ত, কফ বা বায়ু দূষিত স্বেদাদি ধাতুসমূহ উদগীর্ণ হইতে থাকে, আর বমি দি মলমূত্রর ষ্ঠায় গন্ধযুক্ত হয়, তাহা হইলে সেই २श्चिन् - রোগাক্রান্তরোগ তৃষ্ণ, শ্বাস, ও হিঙ্কাদি দ্বারা পড়িত হইয়া হঠাৎ বিনষ্ট হইয়া থাকে। যে বমনরোগে রোগী ক্ষীণ হইয়া যায়, এবং সৰ্ব্বদা রক্তপূ্যাদি মিশ্রিত পদার্থ বমন করে, অথবা XVII ) [ ¢s१ ] বমি বমিতে যদি ময়ূরপুচ্ছের স্তায় আভা দেখিতে পাওয়া যায়, কিংবা বমনরোগের সহিত যদি কাস, শ্বাস, জর, হিক্কা, তৃষ্ণ, ভ্রম, হৃদ্রোগ প্রভৃতি উপদ্রব উপস্থিত হয়, তাহা হইলে এই বমনরোগ অসাধ্য। এই সকল লক্ষণ ভিন্ন অপর সকল প্রকার বমনের চিকিৎসা করিলে আশু প্রতীকার হয়। - চিকিৎসা-সকল প্রকার বমনরোগই আমাশয়ে দোষ সঞ্চিত হইয়া উৎপন্ন হয়, এই জন্য বমনরোগে সৰ্ব্বপ্রথমে লঙ্ঘন দেওয়াই কৰ্ত্তব্য । তাহার পর কফ ও পিত্তনাশক সংশোধন (বমন বিরেচন ) ঔষধ সেবন করান বিধেয়। কিন্তু একটু বিশেষ এই যে, কেবল বাতজ বমনরোগে লঙ্ঘন অকৰ্ত্তব্য। বাতজ বমিরোগে তুল্য জলযুক্ত ছন্থ, সৈন্ধব লবণ ও থুতমিশ্রিত মুগ বা আমলকীর যুদ্ধ পান করিতে দেওয়া উচিত। গুলঞ্চ, ত্রিফল, বহেড়া, আমলকী, নিম্ব, ও পোলত৷ এই সকলের কাথ, মধুসংযোগে পান করিলে পিত্তজ বমিরোগ ভাল হয়। হরীতকীচুর্ণ মধু দ্বারা লেহন করিলে দোষকে অধোগামী অর্থাৎ বিরেচিত করে, এ কারণ শীঘ্রই বমি নিবারিত হয়। বিড়ঙ্গ, ত্রিফল ও শুষ্ঠা চূৰ্ণ সমভাবে গ্রহণ করিয়া মধুর সহিত কিংবা বিড়ঙ্গ, কৈবর্তমুস্তক ও শুষ্ঠচুৰ্ণ সমভাগে মধুর সহিত সেবন করিলে শ্লেয়জ বমিরোগ বিনষ্ট হয় । আমলকী, থৈ ও চিনি ৮ তোলা, একত্র পেষণ করিয়া, তৎসঙ্গে ৮ তোলা মধু এবং ৩২ তোলা জলমিশ্ৰিত করিয়া বস্ত্রদ্বারা ছাকিয়া লইতে হইবে, পরে উহ! পান করিলে ত্রিদোষজ বমিরোগ নিবারিত হয়। গুলঞ্চ দ্বারা হিম ( শীতকায় } প্রস্তুত করিয়া মধু সহযোগে পান করিলে কৃচ্ছসাধ্য ত্রিদোষজ বমিও হঠাৎ প্রশমিত হয়। হরীতকী, ত্রিকটু, ধনে ও জীরা সমভাগে চূর্ণ করিয়া মধুর সহিত লেহন করিলে ত্রিদোষজ বমি ও অরুচি নষ্ট হয়। বেলছাল, গুলঞ্চেব কাণ ও ক্ষেত পাপড়ার কাথ মধু সহযোগে পান করিলে সারিপাতিক বমি নিরাকৃত হয়। আমের আঁটি ও বিবের কাথ মধু ও চিনি সহযোগে পান করিলে বমি ও অতীসার বিনষ্ট হয়। জাম ও আমের পাতা দ্বারা কাথ প্রস্তুত করিয়া শীতল হইলে থৈচূর্ণ ও মধুসংযোগে পান করিলে উন্মাজ বমি, অতীসার ও পিপাসা নষ্ট হয় । অশ্বখবৃক্ষের ছাল শুকাইয়া অগ্নিতে পোড়াইতে হইবে, পরে উহা জলে নিক্ষেপ করিয়া সেই জল পান করিলে অতিদুঃসাধ্য বমিরোগ নিরাকৃত হয়। এলাচি, লবঙ্গ, নাগকেশর, কুলের আটর শাস, থৈ, প্রিয়ঙ্গু, মুস্তক, রক্তচলান ও পিপ্পলী এই সকল দ্রব্য সমভাগে চূর্ণ করিয়া মধুর সহিত লেহন করিলে বাতজ, পিত্তজ ও কফজ এই ত্ৰিবিধ বমিরোগই প্রশমিত হয়।