পাতা:বিশ্বকোষ একাদশ খণ্ড.djvu/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পর্তুগীজ I 8s 1 পর্তুগীজ বাণিজ্যকুঠী ও পরে বঙ্গাধিপের অনুমতি লইয়া একটা দুর্গ নিৰ্ম্মাণ করে । গোয় হইতে এখানে এক এক জন দুর্গাধ্যক্ষ নিযুক্ত হইতেন । শাহ-জছা ১৬২১ খৃষ্টাব্দে যখন বাঙ্গালা আক্রমণ করেন, তৎকালে মাইকেল-রভৃৱিগে হুগলীর শাসনকৰ্ত্ত ছিলেন। শাহজহান বর্ধমান জয় করিয়াছেন শুনিয়া, হুগলীর পর্তুগীজের ভীত হইয়াছিল। তাহারা ভাবিল, শাহজহান্‌ এবার নিশ্চয় হগলী আক্রমণ করিবেন। মাইকেল রডরিগো শাহ-জহানের শিবিরে গমনপূর্বক তাহার সমক্ষে বহু নজর দিয়া রাজসন্মান রক্ষা করিলেন। মাইকেলের বহু যুরোপীয় সৈন্ত ও অনেক কামানাদি যুদ্ধসজ্জা ছিল। এই জন্ত শাহ-জহান তাহাকে আপনার দলে আনিতে চেষ্টা করেন। তিনি জানাইয়াছিলেন যে, পর্তুগীজের যুরোপীয় সৈন্ত ও কামনাস্ত্ৰ দিয়৷ র্তাহার সাহায্য করিলে তিনি উপযুক্ত পুরস্কার দিবেন; কিন্তু পর্তুগীজ-শাসনকর্তা সেরূপ ধাতুর লোক নহেন, শাহ-জহানের পক্ষ লইলে তাহদের স্বার্থহানি ঘটিতে পারে ভাবিয়া রড্রিগে৷ সম্মত হইলেন না। তাহাতে শাহ-জহান পর্তুগীজদিগের উপর বিরক্ত হইলেন ; কিন্তু এ সময়ে পর্তুগীজদিগের সহিত বিবাদ করা যুক্তিযুক্ত নহে বিবেচনায়, তিনি পর্তুগীজশাসনকর্তাকে আর কিছু বলিলেন না। শাহ-জহান কিছু না বলায় পর্তুগীজের আরও দুৰ্দ্ধৰ্ষ হইয়৷ উঠিল । তাহদের উৎপাতে নিম্ন-বঙ্গ অস্থির হইল। ভাগীরণী দিয়া যে সকল জাহাজ বা নৌকা যাইত, প্রত্যেকের নিকট হইতে পর্তুগীজের মাশুল আদায় করিতে লাগিল । এই সময় ছেলে-ধরার ভয় হইয়াছিল। পর্তুগীজের ছোট ছোট ছেলে ধরিয়া বিভিন্নদেশে লইয়া গিয়া বিক্রয় করিত। এ ছাড়া ইহার মধ্যে মধ্যে পূর্ববঙ্গে গিয়া মগদিগের সহিত মিশিয় স্থলে ও জলে বড়ই উৎপাত করিত । ইহাদের উৎপাতে কত সহর, কতশত গ্রাম উৎসন্ন হুইয়াছে, কতশত বণিকের সর্বনাশ হইয়াছে, তাহ বলিয়া শেষ করা যায় না। কাসিম খাঁ বঙ্গের স্ববাদার হইয়া দিল্লীশ্বর শাহ-জহানকে পর্তুগীজদিগের ব্যবহারের কথা লিখিয়া পাঠাইলেন, পূৰ্ব্ব হইতেই মাইকেল রডরিগোর অবাধ্যতায় সম্রাট্র বিরক্ত ছিলেন, এখন তিনি ‘প্রতিমাপূজক ফিরিঙ্গাদিগকে ৯ রাজ্য হইতে বিদূরিত করিবার আদেশ দিলেন । অনেক স্থান তাহাদের হস্তচু্যত হইতে লাগিল । এই বৎসর দিল্লীশ্বরের আদেশে অসংখ্য মোগলসৈন্ত আসিয়া জলপথে ও স্থলপথে চারিদিক্ হইতে হুগলী আক্রমণ করিল। পৰ্ত্তগীজগণ অসীমসাহসে মানসন্ত্রম ও রক্ষায় প্রবৃত্ত হইল। ২১এ জুন * হইতে ২৯এ সেপ্টেম্বর পর্য্যস্ত (৩ মাস ৮ দিন ) শত্রর ভীষণ আক্রমণ হইতে দুৰ্গরক্ষা করিয়া শেষে আত্মসমর্পণ করিতে বাধ্য হইয়াছিল। গোয় হইতে সাহায্য প্রত্যাশায় তাহার এতদিন পর্য্যস্ত যুঝিয়াছিল, কিন্তু আর পারিল না। মোগলদিগের গোলায় বহুসংখ্যক পর্তুগীজ উড়িয়া গেল। অবশিষ্ট পর্তুগীজ আর রক্ষা নাই জানিয়া, স্ত্রীকস্তাগণের সন্ত্রমরক্ষার জন্ত বারুদঘরে অগ্নিপ্রদান করিল, তাহাতে বহুসংখ্যক নরনারী মুহূৰ্ত্ত মধ্যে কালের অনস্তস্রোতে বিলীন হইয়া গেল। এদিকে মোগলের পর্তুগীজদিগের প্রায় ০০০ পোত বিনষ্ট করিল। দুই খানি জাহাজ অতি কষ্ট্রে শত্রুর হস্ত এড়াইয়া গোয়ায় সেই নিদারুণ সংবাদ দিতে চলিল । তৎকালে বহু পর্তুগীজ স্ত্রী পুরুষ ও বালক বন্দী হইয়া আগ্রায় সম্রাটু সমীপে আনীত হইল। পর্তুগীজ স্ত্রীলোকগণ মুসলমান অন্তঃপুরে পরিচারিকারূপে গৃহীত হইল। বাম্বকদিগকে ত্বকৃচ্ছেদ করিয়া মুসলমান করা হইল। ধৰ্ম্মধ্বজিগণ বহু লাঞ্ছনার পর মুক্তি পাইলেন। হুগলীর বাণিজ্যকেন্দ্র হইতে পর্তুগীজদিগের বহু অর্থ লাভ হইত, এখন বঙ্গের সেই প্রধানস্থান হস্তচু্যত হওয়ায়, পর্তুগীজের হতাশ হইয় পড়িল। তাহার উপায়ান্তর না দেখিয়া, এখন বিজয়নগররাজের সহিত সন্ধি করিল। বিজয়নগরপতির সাহায্যে ওলন্দাজদিগকে বিদূরিত করিবার চেষ্টা সেই সঙ্গে উদ্দীপ্ত হইয়া উঠিল । এদিকে তাহীদের অপর প্রতিদ্বন্দ্বী ফরাসীরা ভারত-উপকূলে আসিয়া উপস্থিত হইল । এই সময় মোগলের দক্ষিণাত্যে আধিপত্য বিস্তারে যত্নবান্‌ হওয়ায়, পর্তুগীজের আরও ভীত হইয়া পড়িয়ছিল। তাছার জানিত, দক্ষিণাত্যে মোগল-আধিপত্য বিস্তুত হইলে তাঁহাদিগকে আর ভারতে থাকিতে হইবে না। এই সময় গোয়ার আর্কবিশপ পর্তুগালরাজকে জানাইয়াছিলেন—“ভারতসমুদ্রে পর্তুগীজদিগের বহু শত্রু আছে বটে, কিন্তু পর্তুগালরাজের প্রজাগণই তাহার প্রধানশক্র । সেই সময় জেসুইটগণের উৎপাতে কেবল ভারতবাসী নহে, পর্তুগীজ ১৬৩৩ খৃষ্টাবে পর্তুগীজগণ নানাস্থানে অপমানিত ও কৃতপাপের প্রতিফল ভোগ করিতে লাগিলেন। এক একটা করিয়া

  • মুসলমানের পর্তুগীজদিগকে প্রতিমাপুজক ফিরিঙ্গ বলিত।

ΧΙ >>

  • মুসলমান ঐতিহাসিকের মতে ১.৪১ হিজির ( ১৬৩২ খৃষ্টাবে ) sal corres së vitaifa zaoirs ł (Stewart's History of Bengal. p. 152) কিন্তু পর্তুগীজ ঐতিহাসিকের মতে ২১এ জুন। (Danvers Portuguese in India, Vol. II p, 247.)