পাতা:বিশ্বকোষ দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

بیبیسی ========= পাইলেন। তিনি ভাবিলেন, আবুল-ফজলকে বিনষ্ট করিতে পারিলে তাহার জার কোন আশঙ্কা থাকে । না । পিতার কাছে প্রতিপন্ন হইতেও তাহাকে কোন কষ্ট পাইতে হইৰে মা। ফজলের প্রাণ নষ্ট করিবার এই সুযোগ । বীর সিংহ তখন উগুচার রাজা । তাহার সঙ্গে আকবরের সম্ভাব ছিল না। আবুল-ফজলকে মারিয়া ফেলিবার নিমিত্ত সলিম, রাজা বীর সিংহকে নিযুক্ত করিলেন। দক্ষিণ দেশ হইতে আসিতে হইলে উগুচ৷ রাজ্যের ভিতর দিয়া আসিবার সম্ভাবনা । ধীয় সিংহ চারি দিকে লোক রাখিলেন । আবুল-ফজল দক্ষিণে আপনার পুত্র আবদুর রহমনের হাতে সমস্ত সৈন্সের ভার দিয়া আগ্রা যাত্রা করিলেন । সঙ্গে কেবল জন কতক প্রহরী। তিনি উজ্জয়িনী পৰ্য্যন্ত অসিলেন, পথে কোথাও বিপদের আশঙ্কা দেখিলেন না । কিন্তু উজ্জয়িনীর লোকের সলিমের দুরভিসন্ধির একটু আভাস পাইয়াছিল। তাহার। আবুল-ফজলকে সতর্ক করিয়া দিল। আবুল-ফজলের অনুচরেরাও তাহাকে ঘাটী চান্দা দিয়া আনিবার নিমিত্ত অনেক চেষ্টা পাইল ; কিন্তু তিনি কাহারও পরামর্শ শুনিলেন না । আবুল-ফজল মরোয়ারের পথে আসিতে লাগিলেন। শেষে আর অধিক দূর নয়, সরাই-বার হইতে অৰ্দ্ধ-ক্রোশ পরেই কাল স্বরূপ বীর সিংহের লোকেরা আসিয়া সম্মুখে পড়িল । গদাই খাঁ নামক আবুলফজলের জনৈক বিশ্বাসী চাকর যুদ্ধ করিতে নিযেধ করিল। তখন তিন ক্রোশ দূরে অস্ত্রী নামক একটা স্থানে সম্রাটের তিন হাজার তুরুকসোয়ার ছিল। আবুল-ফজল মনে করিলে অনায়াসে সেই খানে পলাইতে পারিতেন। কিন্তু সংগ্রামে বিমুখ হওয়া কাপুরুষের কাজ ; সে জন্ত তিমি বীরোচিত দৰ্প করিয়া যুদ্ধে মাতিলেন। শত্রুরা চারি দিকে আসিয়া ঘিরিল । আর কোন দিকে পলাইবার পথ নাই, শেষে এক জন তুরুকসোয়ার রর্শ দ্বারা তাহার বক্ষঃস্থল বিধিয়া ফেলিল । আবুল-ফজল ধূলায় লুটাইরা পড়িলেন। বীর সিংহ আসিয় তাহার মস্তকচ্ছেদন করেন। পরে সেই মস্তক অfলাহাবাদে সলিমের কাছে প্রেরিত হয় । সলিম, মনের ঘৃণা দেখাইবার নিমিত্ত অনেক দিন পৰ্য্যন্ত সেই মাগ" একটা কদৰ্য্য স্থানে ফেলিয়া রাখিয়াছিলেন । সম্রাট এক দুই করিয়া দিন গণিতেছেন, আবুল-ফজল, আসিবেন । কিন্তু আবুল ফজল আসিলেন না, আগ্রায় [ ১০২] জাবুল-ফজল - - - - - তাহার মৃত্যু সংবাদ পৌছিল। আর সকলেই শুনিল, আকবর জানিলেন না,--তাহাকে এ সংবাদ শুনায় কে ? তৈমুর বংশের এই রীতি ছিল, রাজপুত্র প্রভৃতি কাহার মৃত্যু হইলে তাহার উকিল হাতে কাল রুমাল ৰাখিয়। সম্রাটের কাছে উপস্থিত ছটতেন । আবুল ফজলের মৃত্যুর সংবাদ দিবার জন্ত তাহার উকিল হাতে রুমাল বাধিয়া আকবরের সম্মুখে গেলেন। উকিলকে দেখিয়া সম্রাটের প্রাণ উড়িয়া গেল । শেষে শুনিলেন যে, সলিমই আবুল-ফজলের মৃত্যুর কারণ । অকবর মনোদুঃখে বলিলেন,—‘সলিমের যদি রাজ্য পাইবার ইচ্ছা হইয়াছিল, সে আমার প্রাণ বিনষ্ট করিল না কেন ? আবুল-ফজল বাচিয়া থাকিলে আমি সুখী হইতাম । বীর সিংহকে বিনষ্ট করিবার নিমিত্ত সত্ৰাট, পাত্রসিংহ এবং রাজ সিংহকে নিযুক্ত করিলেন। কয়েকবারের যুদ্ধে বীর সিংহ পরাস্ত হন। শেষে তিনি জঙ্গলের ভিতরে পলাইয় যান। রাজ সিংহ পুনৰ্ব্বার তাহাকে যুদ্ধে পরাস্ত করেন। কিন্তু কিছু কাল পরেই আকবরের মৃত্যু হয় । সে কারণ বীর সিংহের আর আশঙ্কা থাকিল না । জাহাঙ্গীর সম্রাট হইলে তিনি উগুচ। পুরস্কার পাইয়াছিলেন এবং তিন হাজার অশ্বারোহী সৈন্তের মন্সব হন । ag পুস্তক-আবুল-ফজল তৎকালের এক জন প্রসিদ্ধ লেখক ছিলেন। তাহার প্রণীত অনেক গুলি পুস্তক আছে । (১) অকবর নামা, এই পুস্তকের অন্তর্গত প্রসিদ্ধ আইন-ই-আকবরী । ইহাতে সম্রাট আকবরের সময়ের সমস্ত বৃত্তাস্ত লিখিত হইয়াছে। (২)মুক্ত ৰাতী আল্লামী; ইহার অপর নাম ইন্মাই অাৰুল-ফজল । আবুল-ফজল, রাজ এবং তখনকার সর্দার প্রভূতিকে যে সকল পত্র লিখিয়াছিলেন, ইহাতে সেই গুলি সঙ্কলিত হইয়াছে । (৩) আইয়ার-ই-দানিশ । এতদ্ভিন্ন, রিসালহ-ই-মুনাজাত অর্থাৎ উপাসনা-গ্রন্থ ; জামি-উলুঘাত, অর্থাৎ অভিধান ; এবং কস্থ্যোল অর্থাৎ ভিক্ষাপাত্র আবুল-ফজলের রচিত বলিয়। প্রসিদ্ধ আছে । আবুল-ফজলের রচনা মধুর, গম্ভীর এবং সতেজঃ । বোখারার রাজা আবদুল্লা একবার বলিয়াছিলেন যে, সম্রাট আকবরের তীরের চেরে আবুল-ফজলের লেখ। দেখিলে তাহার অধিক ভয় হয় । চরিত্র-আবুল-ফজলের চরিত্র বিশুদ্ধ ছিল । তিনি শত্রুর প্রতিও কখন রূঢ় বাক্য প্রয়োগ করেন নাই ।