अछिमझ কি ?--সহজে ত বিলম্ব করিতে পারেন না। সহজে বিলম্ব করিলেই সর্থীরা বিদ্রুপ করিবে। তাই চতুর বালিকা চাতুরী করিয়া বলিলেন— অণস্থয়ে! আহিণবকুসমৃদএ পরিকৃখদং মে চলণং কুরুবঅসাহাপরিলগং অ বঙ্কলং। অনস্থয়ে! আর ত আমি চলিতে পারি না ; নূতন নুতন কুশের অঙ্কুরগুলা পায়ে যেন ছুচের মত বিধিতেছে। আবার কুরুবক ডালে আমার বাকল লাগিয়া গিয়াছে। এই বলিয়া কুরুবক ডাল হইতে বাকল ছাড়াই তেছেন আর আড় চক্ষে রাজাকে দেখিতেছেন। এই ছল করিয়া শকুন্তলা মুখ শিট কাইলেন,— পায়ে যেন কত ব্যথাই পাইয়াছেন। মুখ শিট কাইয়৷ দাড়াইয়া থাকিলেন ;— রাধিক গোপবালিকাদের লইয়া যমুনায় জল লইতে আসিয়াছেন। দেখেন, ঘাটে জগতের মন ভুলানে হামশশী যমুনা আলো করিয়া আছেন। গোপিকার জলে ঢেউ দিয়া কলসী পূরিতেছেন আর চক্ষু ভরিয়া , কেবল সেই কাল রূপ দেখিতেছেন। রাধিক সকলের আগে আসিয়া কুলে উঠিলেন,— সব জন তেজিয়া আওসরি ফুকরই আড় বদন তঁহি ফেরি । তছি পুন মোতি-হার টুটি ফেলল, কহত হার টুটি গেল। সব জন এক এক চুনি সঞ্চরু শু্যাম দরশ ধনী কেল। রাধিক সঙ্গিনীদের ছাড়িয়া আগে উপরে আসিয়া উঠিলেন । উঠিয়া সহচরীদের ডাকিতেছেন,—‘এসো না বেলা গেল যে’ । এই বলিতেছেন আর আড় চক্ষে কেবল কৃষ্ণের পানে ফিয়িয়া ফিরিয়া দেখিতেছেন। কিন্তু বিলম্ব করা চাই ; বিলম্ব না করিলে কৃষ্ণ দেখা হয় না । তাই শেযে ছল করিয়া গলার মতির মালা ছিড়িয়া ফেলিলেন। ছিড়িয়া সর্থীদের বলিলেন;– ‘এই যা মতিহার ছিড়ে গেল’ । এই বলিয়া সকলে এ দিক ও দিক্ বেড়াইয়া মতি কুড়াইতে কুড়াইতে চক্ষু ভয়িয়া কৃষ্ণকে দেখিতে লাগিলেন । এই সকল স্থলে নায়ক দর্শনে নায়িকার মনে প্রকৃত যে ভাব হইয়াছিল ; মনের যে প্রকার যথার্থ ৰিকারের নিমিত্ত শকুন্তলা যাইতে যাইতে দাড়াইয়াছিলেন, রাধিক মতিহার ছিড়িয়াছিলেন,-অভিনয় ব্যাপারে [ ૪૯૦ ] एङिमश्च ঠিক সেই রূপ মনের ভাব প্রকাশ করা আবশ্যক। অঙ্গভঙ্গী দ্বারা মনের ভাব প্রকাশ করাই অভিনয়েয় জীবন। দুষ্ম্যন্তেয় নিকট হইতে শকুন্তলা যাইতেছেন, পায়ে কুশান্থয় বিধিতেছে, গাছে বাকল লাগিয়া গিয়াছে,— সামান্তভাবে এ সকল অমুকরণ করা কঠিন নয়। কিন্তু ঠিক তখনকার শকুন্তলার মত চলিতে চলিতে না দাড়াইতে পারিলে তাহা অভিনয় হইবে না,-সে দাড়ানোতে সৌন্দর্য্য থাকিবে না । বিভৎস রৌদ্র করুণ প্রভৃতি রসযুক্ত বাক্য দ্বার মনের ভাব অনুকরণ করিলে তাহাকে বাচিক কহে । নাটকে বাক্য দ্বারা মনের ভাব প্রকাশ করিতে হইলে,— অল্প কথায়, একটু একটু ছল রাখিয়া, কিঞ্চিৎ অস্পষ্ট করিয়া মনের কথা বলা চাই। এ জন্ত নাট্যশাস্ত্রজ্ঞ লোকে বলিয়া থাকেন যে, অভিনয় এক জনের গুণে মনোহর হয় না। প্রথমে, নাটক খানি সুকবির রচিত হওয়া আবশ্বক, তাহার পর অভিনেতৃগণ সদ্বক্তা, সুগায়ক, সুত্র এবং অমুকরণনিপুণ হইবে। এই সকল গুণগুলি না থাকিলে অভিনয় প্রতিকর হওয়৷ অসম্ভব । দুষ্ম্যন্তরাজার জন্য শকুন্তলার অন্তঃকরণে সহস্র ষিছার জাল উপস্থিত হইয়াছে। অত্যন্ত গাত্রদাহ, শরীর জলিয়া পুড়িয়া গেল, এই ভান করিয়া তিনি চক্ষু মুদিয়া শুইয়া আছেন । প্রিয়ম্বদা এবং অনস্বয়া কাছে আসিয়া পদ্ম পাতার বাতাস করিতে লাগিল । বাতাস করিতে করিতে একবার সোহাগ করিয়া শকুন্তলাকে জিজ্ঞাসা করিল,— হল সউন্দলে! অবি মুহআদি দে গলিণীপত্তবাদো ? কেমন শকুন্তলে ! পদ্ম পাতার বাতাসে এইবার একটু স্বস্তি বোধ হচ্চে না ? কিন্তু স্বস্তি বোধ হইবে কি, শকুন্তলা বলিয়া বসিলেন,—কিং বীঅঅস্তি মং সহীও ? সর্থীরা আমাকে বাতাস করিতেছ নাকি ? মনের বেগ আর ধরে না ! কেবল চারিট শব্দ। চারিট শব্দে শকুন্তলার যত জ্বালা একেবায়ে জীবন্ত হইয়া সকলই প্রকাশ পাইয়াছে। দুষ্ম্যম্ভরাজার নিমিত্ত তাহার এরূপ কষ্ট হইয়াছে যে, সখীয়া পদ্ম পত্রের বাতাস করিতেছেন, শকুন্তলা তাহা জানিতেও পারেন নাই। এখানে কেবল কয়েকট শব্দে মনের কথা বলা হুইয়াছে, হৃদরের বেঞ্চন খুলিয়াও বলা হয় নাই, অথচ সকল বিষয় এরূপ প্রকাশিত হইয়াছে যে, মনোভাব
পাতা:বিশ্বকোষ প্রথম খণ্ড.djvu/৪৭৪
অবয়ব