দরিদ্রনারায়ণের মোহভঙ্গ
চাবকে লাল ক’রে ধ’রে বেঁধে বাড়ি পাঠিয়ে দাও।” আর আইন জারি হল, “ভিটে ছেড়ে প্রজার যাওয়াই নিষেধ।”
প্রজার সে ভিটেকে ভদ্রাসন বললে ঠাট্টা করা হয়। জঙ্গলের কাঠ কাটা দূরে থাক্, প্রজার কাঠকুড়োনো পর্যন্ত বারণ,—কুডুলের আওয়াজ কোথাও শোনা যাচ্ছে কি না, সেদিকে কান পেতে জমিদারের সওয়ার সারাদিন ঘুরছে। অগত্যা, ডাঁটা-লতা-পাতা জড়িয়ে কোনো রকমে দেওয়াল-খাড়া-করা খড়ের ছাউনি-দেওয়া তাদের ঘর। তবু মানুষ-থাকার ঘরগুলো ওরি মধ্যে একটু মজবুত, জানোয়ারদের ঘরের পল্কা দেওয়ালে বাইরের জলবাতাস একেবারেই রোখে না, আর গোরুর খাবারের অনাটন হলে চালের খড় প্রায়ই নেমে আসে। এ অবস্থায় দারুণ শীতের সময় যত গোরু-শুয়োর সব মানুষ-থাকা ঘরে না ঢোকালে তারা বাঁচে না। এতে স্বস্তি-স্বাস্থ্যের যা হাল হয় তা কি বর্ণনার অপেক্ষা রাখে।
আর প্রজাদের খাবার? দুর্বৎসরে যে দানাটুকু জোটে তা ভেঙে রুটি হওয়ার কাছ দিয়েও যায় না, কাজেই ছাই-পাঁশ মেশানো সে দানার সঙ্গে জংলী ঘাস-পাতা থেঁৎলে পেট-ভরানো চেহারার রুটির মতো একটা কিছু দাঁড় করাতে হয়,—যা শুঁখলে কুকুর বেড়াল মুখ ফেরায়, মুরগিকে খাওয়ালে মারাই পড়ে,—প্রজারা পেটের জ্বালায় বমি চেপে তাই গেলে। তার উপর কাঁচা জ্বালানির চিড়বিড়ে ধোঁয়ার তাড়সে ওদের চোখের মাথা খাওয়া যায়, বয়স না যেতেই প্রায় অন্ধ।
গাঁয়ে থাকলে না খেয়ে মরা, গ্রাম ছাড়লে মার খেয়ে মরা, এই এমনেও গেছি অমনেও গেছি অবস্থায় ওরা মরিয়া হয়ে চুরিডাকাতি,
২০