পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একত্রিংশত্তম পরিচ্ছেদ : সকল সুখেরই সীমা আছে ఫి(t ন। কেবল একটি ছোটো “না” বলিয়া আবার চুপ করিলে। তুমি কি আমায় আর ভালবাস না ? কু। বাসি বই কি ? ন। “বাসি বই কি ?” এ যে বালক-ভুলান কথা। কুন্দ, বোধ হয়, তুমি আমায় কখন ভালবাসিতে না । কু। বরাবর বাসি। নগেন্দ্ৰ বুঝিয়াও বুঝিলেন না যে, এ সূর্য্যমুখী নয়। সূৰ্য্যমুখীর ভালবাসা যে কুন্দনন্দিনীতে ছিল না—তাহী নহে–কিন্তু কুন্দ কথা জানিতেন না। তিনি বালিকা, ভীরুস্বভাব, কথা জানেন না, আর কি বলিবেন ? কিন্তু নগেন্দ্র তাহা বুঝিলেন না, বলিলেন, “আমাকে সূৰ্য্যমুখী বরাবর ভালবাসিত। বানরের গলায় মুক্তার হার সহিবে কেন ?—লোহার শিকলই ভাল।” এবার কুন্দনন্দিনী রোদন সংবরণ করিতে পারিলেন না। ধীরে ধীরে উঠিয়া বাহিরে গেলেন। এমন কেহ ছিল না যে, তাহার কাছে রোদন করেন। কমলমণি আসা পর্য্যন্ত কুন্দ তাহার কাছে যান নাই—কুন্দনন্দিনী, আপনাকে এ বিবাহের প্রধান অপরাধিনী বোধ করিয়া লজ্জায় তাহার কাছে মুখ দেখাইতে পারেন নাই। কিন্তু আজিকার মর্শ্বপীড়া, সহৃদয়া স্নেহময়ী কমলমণির সাক্ষাতে বলিতে ইচ্ছা করিলেন। সে দিন, প্রণয়ের নৈরাশ্বের সময়, কমলমণি র্তাহার দুঃখে দুঃখী হইয়া, তাহাকে কোলে লইয়া চক্ষের জল মুছাইয়। দিয়াছিলেন—সেই দিন মনে করিয়া তাহার কাছে কাদিতে গেলেন। কমলমণি কুন্দনন্দিনীকে দেখিয়া অপ্রসন্ন হইলেন—কুন্দকে কাছে আসিতে দেখিয়া বিস্মিত হইলেন, কিছু বলিলেন না। কুন্দ তাহার কাছে আসিয়া বসিয়া, কাদিতে লাগিলেন । কমলমণি কিছু বলিলেন না; জিজ্ঞাসাও করিলেন না, কি হইয়াছে। সুতরাং কুন্দনন্দিনী আপনা আপনি চুপ করিলেন। কমল তখন বলিলেন, “আমার কাজ আছে।” অনন্তর উঠিয়া গেলেন । কুন্দনন্দিনী দেখিলেন, সকল মুখেরই সীমা আছে।