ত্রয়ন্ত্রিংশত্তম পরিচ্ছেদ ঃ ভালবাসার চিহ্নস্বরূপ . دهد দেখিয়া হীরাকে তিরস্কার করিত, কিন্তু বাস্থায়ী হীরার নিকট তাল র্যাদিতে পারিত না । দেওয়ানজী, এ সকল বৃত্তান্ত শুনিয়া, হীরাকে বলিলেন, “তুমি দূর হও । তোমাকে জবাব দিলাম।” শুনিয়া হীরা রোষবিস্ফারিতলোচনে দেওয়ানজীকে কহিল, “তুমি জবাব দিবার কে? আমাকে মুনিব রাখিয়া গিয়াছেন। মুনিবের কথা নহিলে আমি যাইব না। আমাকে জবাব দিবার তোমার যে ক্ষমতা, তোমাকে জবাব দিবার আমারও সে ক্ষমতা ।” শুনিয়া দেওয়ানজী অপমানভয়ে দ্বিতীয় বাক্যব্যয় করিলেন না । হীরা আপন জোরেই রহিল । সূৰ্য্যমুখী নহিলে কেহ হীরাকে শাসিত করিতে পারিত না । এক দিন নগেন্দ্র বিদেশ যাত্রা করিলে পর, হীর একাকিনী অন্তঃপুরসন্নিহিত পুষ্পোদ্যানে লতামণ্ডপে শয়ন করিয়াছিল। নগেন্দ্র ও সূৰ্য্যমুখী পরিত্যাগ করা অবধি সে সকল লতামণ্ডপ হীরারই অধিকারগত হইয়াছিল। তখন সন্ধ্যা অতীত হইয়াছে। আকাশে প্রায় পূর্ণচন্দ্র শোভা করিতেছে। উদ্যানের ভাস্বর বৃক্ষপত্রে তৎকিরণমালা প্রতিফলিত হইতেছে। লতাপল্লবরত্নমধ্য হইতে অপসৃত হইয়। চন্দ্রকিরণ শ্বেতপ্রস্তরময় হৰ্ম্ম্যতলে পতিত হইয়াছে এবং সমীপস্থ দীর্ঘিকার প্রদোষবায়ুসস্তাড়িত স্বচ্ছ জলের উপর নাচিতেছে। উদ্যানপুষ্পের সৌরভে আকাশ উন্মাদকর হইয়াছিল। এমত সময় হীর অকস্মাৎ লতামগুপমধ্যে পুরুষমূৰ্ত্তি দেখিতে পাইল। চাহিয়া দেখিল যে, সে দেবেন্দ্র। অদ্য দেবেন্দ্র ছদ্মবেশী নহেন, নিজবেশেই আসিয়াছেন । হীরা বিস্মিত হইয়া কহিল, “আপনার এ অতি দুঃসাহস । কেহ দেখিতে পাইলে আপনি মারা পড়িবেন।” দেবেন্দ্র বলিলেন, “যেখানে হীরা আছে, সেখানে আমার ভয় কি ?” এই বলিয়া দেবেন্দ্র হীরার পাশ্বে বসিলেন । হীরা চরিতার্থ হইল। কিয়ৎক্ষণ পরে কহিল, “কেন এখানে এসেছেন। যার আশায় এসেছেন, তার দেখা পাইবেন না ।” “তা ত পাইয়াছি । আমি তোমারই আশায় এসেছি।” ইরা লুব্ধ চাটুকারের কপটালাপে প্রতারিত না হইয়া হাসিল এবং কহিল, “আমার কপাল যে এত প্রসন্ন হইয়াছে, তা ত জুনি না। যাহা হউক, যদি আমার ভাগ্যই ফিরিয়াছে, তবে যেখানে নিষ্কণ্টকে বসিয়া আপনাকে দেখিয়া মনের তৃপ্তি হইবে, এমন স্থানে যাই চলুন। এখানে অনেক বিস্তু ” দেবেন্দ্র বলিলেন, “কোথায় যাইব ?” হীরা বলিল, “যেখানে কোন ভয় নাই। আপনার সেই নিকুঞ্জ বনে চলুন।”
পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১০৮
অবয়ব