ত্রিচারিংশত্তম পরিচ্ছেদ : প্রত্যাগমন ১২৯ হইলে কমলমণির চলে না, সুতরাং তিনিও বিনা জিজ্ঞাসাবাদে সতীশকে লইয়া শ্ৰীশচন্দ্রের নৌকায় গিয়া উঠিলেন। t কমলমণি আগে গোবিন্দপুরে আসিলেন, দেখিয়া কুন্দনন্দিনীর বোধ হইল, আবার আকাশে একটি তারা উঠিল। যে অবধি সূৰ্য্যমুখী গৃহত্যাগ করিয়া গিয়াছিলেন, সেই অবধি কুন্দনন্দিনীর উপর কমলমণির দুর্জয় ক্রোধ ; মুখ দেখিতেন না। কিন্তু এবার আসিয়া কুন্দনন্দিনীর শুষ্ক মূৰ্ত্তি দেখিয়া কমলমণির রাগ দূর হইল—দুঃখ হইল। তিনি কুন্দনন্দিনীকে প্রফুল্লিত করিবার জন্য যত্ন করিতে লাগিলেন, নগেন্দ্র আসিতেছেন, সংবাদ দিয়া কুন্দের মুখে হাসি দেখিলেন। সূৰ্য্যমুখীর মৃত্যুসংবাদ দিতে কাজে কাজেই হইল। শুনিয়া কুন্দ কঁদিল। এ কথা শুনিয়া, এ গ্রন্থের অনেক সুন্দরী পাঠকারিণী মনে মনে হাসিবেন ; আর বলিবেন, “মাছ মরেছে, বেরাল কাদে।” কিন্তু কুন্দ বড় নিৰ্ব্বোধ। সতিন মরিলে যে হাসিতে হয়, সেট। তার মোট বুদ্ধিতে আসে নাই। বোকা মেয়ে, সতিনের জন্যও একটু কাদিল । আর তুমি ঠাকুরাণি ! তুমি যে হেসে হেসে বলতেছ, “মাছ মরেছে, বেরাল কাদে”—তোমার সতিন মরিলে তুমি যদি একটু কাদ, তা হইলে আমি বড় . তোমার উপর খুসী হব। কমলমণি কুন্দকে শাস্ত করিলেন। কমলমণি নিজে শান্ত হইয়াছিলেন। প্রথম প্রথম কমল অনেক কাদিয়াছিলেন—তার পরে ভাবিলেন, “র্কাদিয়া কি করিব ? আমি কাদিলে খ্ৰীশচন্দ্র অসুখী হন—অামি কাদিলে সতীশ কাদে—কাদিলে ত সূৰ্য্যমুখী ফিরিবে না ; তবে কেন এদের কাদাই ? আমি কখন সূৰ্য্যমুখীকে ভুলিব না ; কিন্তু আমি হাসিলে যদি সতীশ হাসে, তবে কেন হাসব না ?” এই ভাবিয়া কমলমণি রোদনত্যাগ করিয়া আবার সেই কমলমণি হইলেন। কমলমণি শ্ৰীশচন্দ্রকে বলিলেন, “এ বৈকুণ্ঠের লক্ষী ত বৈকুণ্ঠ ত্যাগ করিয়া গিয়াছে। তাই বোলে দাদা বাবু বৈকুণ্ঠে এসে কি বটপত্রে শোবেন ?” শ্ৰীশচন্দ্র বলিলেন, “এসে, আমরা সব পরিষ্কার করি।” # অমনি শ্ৰীশচন্দ্র, রাজ, মজুর, ফরাস, মালী, যেখানে যাহার প্রয়োজন, সেখানে তাহাকে নিযুক্ত করিলেন। এদিকে কমলমণির দৌরাত্ম্যে ছুচ, বাছড়, চামচিকে মহলে বড় কিচি মিচি পড়িয়া গেল ; পায়রাগুলা “বকম বকম” করিয়া এ কাৰ্ণিশ ও কাৰ্ণিশ করিয়া বেড়াইতে লাগিল, চড়ুইগুলা পলাইতে ব্যাকুল—যেখানে সালী বন্ধ, সেখানে দ্বার খোলা মনে করিয়া, ঠোটে কাচ লাগিয়া ঘুরিয়া পড়িতে লাগিল ; পরিচারিকার কাটা হাতে ১৭
পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৩৪
অবয়ব