অষ্টচত্বারিংশত্তম পরিচ্ছেদ : কুন্দের কার্য্যতৎপরতা Ꮌ8Ꮼ কথা কৌশল্যার কানে গেল। কৌশল্যা কহিল, “চেন ন, নেকি? আমাদের ঘরের লক্ষ্মী আর তোমার যম ।” কৌশল্যা এত দিন হীরার ভয়ে চোরের মত ছিল, আজি দিন পাইয়া ভালমতে চোখ ঘুরাইয়া লইল। বেশবিদ্যাস সমাপ্ত হইলে এবং সকলের সঙ্গে আলাপ কুশল শেষ হইলে, সূৰ্য্যমুখী কমলের কানে কানে বলিলেন, “তোমায় আমায় একবার কুন্দকে দেখিয়া আসি। সে আমার কাছে কোন দোষ করে নাই—বা তাহার উপর আমার রাগ নাই। সে আমার এখন কনিষ্ঠ ভগিনী।” কেবল কমল ও সূৰ্য্যমুখী কুন্দের সম্ভাষণে গেলেন। অনেকক্ষণ র্তাহাদের বিলম্ব হইল। শেষে কমলমণি ভয়নিক্লিষ্টবদনে কুন্দের ঘর হইতে বাহির হইলেন। এবং অতিবাস্তে নগেন্দ্রকে ডাকিতে পাঠাইলেন। নগেন্দ্র আসিলে, বধুরা ডাকিতেছে বলিয়া তাহাকে কুন্দের ঘর দেখাইয়া দিলেন। নগেন্দ্র তন্মধ্যে প্রবেশ করিলেন। দ্বারে সূৰ্য্যমুখীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হইল। স্বৰ্য্যমুখী রোদন করিতেছিলেন। নগেন্দ্র জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি হইয়াছে ?” o, সূৰ্য্যমুখী বলিলেন, “সৰ্ব্বনাশ হইয়াছে। আমি এত দিনে জানিলাম, আমার কপালে একদিনেরও সুখ নাই—নতুবা আমি আবার সুখী হইবামাত্রই এমন সৰ্ব্বনাশ হইবে কেন?” নগেন্দ্র ভীত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি হইয়াছে ?” সূৰ্য্যমুখী পুনরপি রোদন করিয়া কহিলেন, “কুন্দকে আমি বালিকাবয়স হইতেই মানুষ করিয়াছি ; এখন সে আমার ছোট ভগিনী, বহিনের স্তায় তাহাকে আদর করিব সাধ করিয়া আসিয়াছিলাম। আমার সে সাধে ছাই পড়িল । কুন্দ বিষপান করিয়াছে।” নগেন্দ্র। সে কি ? সু। তুমি তাহার কাছে থাক—আমি ডাক্তার বৈদ্য আনাইতেছি। এই বলিয়া সূৰ্য্যমুখী নিফ্রান্ত হইলেন। নগেন্দ্র একাকী কুন্দনন্দিনীর নিকটে গেলেন । o নগেন্দ্র প্রবেশ করিয়া দেখিলেন, কুন্দনন্দিনীর মুখে কালিমা ব্যাপ্ত হইয়াছে। চক্ষু তেজোহীন হইয়াছে, শরীর অবসর হইয়া ভাঙ্গিয়া পড়িতেছে।
পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৪৮
অবয়ব