পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বাদশ পরিচ্ছেদ ; অন্ধুর ఫ్రో ডাক্তার ভাবিল, মন্দ চিকিৎসা নহে। “যে আজ্ঞা, ঔষধের ভাবনা কি," বলিয়। পলায়ন করিল। পরে ডিস্পেন্সরিতে গিয়া একটু সোডা, একটু পোর্ট ওয়াইন, একটু সিরপফেরিমিউরেটস, একটু মাথা মুণ্ড মিশাইয়া, শিশি পূরিয়া, টিকিট মারিয়া, প্রত্যহ দুইবার সেবনের ব্যবস্থা লিখিয়া দিল। সূৰ্য্যমুখী ঔষধ খাওয়াইতে গেলেন ; নগেন্দ্র শিশি হাতে লইয়া পড়িয়া দেখিয়া একটা বিড়ালকে ছুড়িয়া মারিলেন—বিড়াল পলাইয় গেল— ঔষধ তাহার ল্যাজ দিয়া গড়াইয়। পড়িতে পড়িতে গেল । সূৰ্য্যমুখী বলিলেন, “ঔষধ না খাও—তোমার কি অসুখ, আমাকে বল ।” নগেন্দ্র বিরক্ত হইয়া বলিলেন, “কি অসুখ ?” সূৰ্য্যমুখী বলিলেন, “তোমার শরীর দেখ দেখি কি হইয়াছে ?” এই বলিয়া সূৰ্য্যমুখী একখানি দর্পণ আনিয়া নিকটে ধরিলেন। নগেন্দ্র তাহার হাত হইতে দর্পণ লইয়া দূরে নিক্ষিপ্ত করিলেন। দর্পণ চূর্ণ হইয়া গেল। সূৰ্য্যমুখীর চক্ষু দিয়া জল পড়িল। দেখিয়া নগেন্দ্র চক্ষু রক্তবর্ণ করিয়া উঠিয়া গেলেন। বহিৰ্ব্বাট গিয়া একজন ভৃত্যকে বিনাপরাধে প্রহার করিলেন। সে প্রহার . সূর্য্যমুখীর অঙ্গে বাজিল। . ইতিপূৰ্ব্বে নগেন্দ্র অত্যন্ত শীতলস্বভাব ছিলেন। এখন কথায় কথায় রাগ। শুধু রাগ নয়। একদিন, রাত্রে আহারের সময় অতীত হইয়া গেল, তথাপি নগেন্দ্র অন্তঃপুরে আসিলেন না। সূৰ্য্যমুখী প্রতীক্ষা করিয়া বসিয়া আছেন। অনেক রাত্রি হইল। অনেক রাত্রে নগেন্দ্র আসিলেন ; সূৰ্য্যমুখী দেখিয়া বিস্মিত হইলেন। নগেন্দ্রের মুখ আরক্ত, চক্ষু আরক্ত, নগেন্দ্র মদ্যপান করিয়াছেন। নগেন্দ্র কখন মদ্যপান করিতেন না। দেখিয়া সূৰ্য্যমুখী বিস্মিতা হইলেন। সেই অবধি প্রত্যহ এইরূপ হইতে লাগিল। একদিন সূৰ্য্যমুখী, নগেন্দ্রের দুইটি চরণে হাত দিয়া, গলদঙ্গ কোনরূপে রুদ্ধ করিয়া, অনেক অনুনয় করিলেন ; বলিলেন, “কেবল আমার অনুরোধে ইহা ত্যাগ কর।” নগেন্দ্র জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি দোষ ?” জিজ্ঞাসার ভাবেই উত্তর নিবারণ হইল। তথাপি সূৰ্য্যমুখী উত্তর করিলেন, “দোষ কি, তাহা ত আমি জানি না। তুমি যাহা জান না, তাহা আমিও জানি না। কেবল আমার অনুরোধ।” নগেন্দ্র প্রত্যুত্তর করিলেন, “সূর্য্যমুখী, আমি মাতাল, মাতালকে শ্রদ্ধা হয়, আমাকে শ্রদ্ধা করিও। নচেৎ জাবশুক করে না।” -