"দেখ, তুমি গবাক্ষ মুক্ত করিয়াছ, কঁকে ফঁাকে পতঙ্গ আসিয়া তোমার শয্যাগৃহে শ্লেষেণ করিড়েছে। কুন্দ মনে করিতেছে, কি পুণ্য করিলে পতঙ্গজন্ম হয়। কুনা ! প্রভঙ্গ যে পুড়িয়া মরে । কুন্দ তাই চায়। মনে করিতেছে, “আমি পুড়িলাম—মরিলাম न ८कन ?” নগেন্দ্র সালী বন্ধ করিয়া সরিয়া গেলেন। নির্দয় । ইহাতে কি ক্ষতি। না, তোমার রাত্রি জাগিয়া কাজ নাই—নিদ্রা যাও—শরীর অসুস্থ হইবে। কুন্দনন্দিনী মরে, মরুক। তোমার মাথা ন ধরে, কুন্দনন্দিনীর কামনা এই। এখন আলোকময় গবাক্ষ যেন অন্ধকার হইল। চাহিয়া, চাহিয়া, চাহিয়া, চক্ষের জল মুছিয়া, কুন্দনন্দিনী উঠিল। সম্মুখে যে পথ পাইল—সেই পথে চলিল। কোথায় চলিল ? নিশাচর পিশাচ ঝাউগাছেরা সৰ্ব সৰ্ব শব্দ করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কোথায় যাও ?” তালগাছের তত্ত্ব তত্ত্ব শব্দ করিয়া বলিল, “কোথায় যাও ?” পেচক গম্ভীর নাদে বলিল, “কোথায় যাও ?” উজ্জল গবাক্ষশ্রেণী বলিতে লাগিল, “যায় যাউক—আমরা আর নগেন্দ্র দেখাইব না।” তবু কুন্দনন্দিনী—নিৰ্ব্বোধ কুন্দনন্দিনী ফিরিয়া ফিরিয়া সেই দিকে চাহিতে লাগিল। কুন্দ চলিল, চলিল—কেবল চলিল। অাঁকাশে আরও মেঘ ছুটিতে লাগিল—মেঘ সকল একত্র হইয়া আকাশেও রাত্ত্বি করিল—বিদ্যুৎ হাসিল—আবার হাসিল—আবার ! বায়ু গৰ্জিল, মেঘ গৰ্জিল—বায়ুতে মেঘেতে একত্র হইয়া গৰ্জিল। আকাশ আর রাত্রি একত্র হইয় গজিল। কুন্দ । কোথায় যাইবে । so ঝড় উঠল। প্রথমে শব্দ, পরে ধূলি উঠিল, পরে গাছের পাতা ছিড়িয়া লইয়া বায়ু স্বয়ং আসিল । শেষে পিট পিটু —পটু পটু —ছু ছ! বৃষ্টি আসিল । কুন্দ ! কোথায় যাইবে ? - 孙 বিদ্যুতের আলোকে পথিপার্থে কুন্দ একটা সামান্ত গৃহ দেখিল। গৃহের চতুষ্পার্থে মৃৎপ্রাচীর ; মৃৎপ্রাচীরের ছোট চাল। কুন্দনন্দিনী আসিয়া তাহার আশ্রয়ে, দ্বারের নিকটে বসিল। স্বারে পিঠ রাখিয়া বসিল । দ্বার পিঠের স্পর্শে শদিত হইল। গৃহস্থ সজাগ, দ্বারের শব্দ তাহার কাণে গেল। গৃহস্থ মনে করিল, ঝড় ; কিন্তু তাহার দ্বারে একটা কুৰুর শয়ন করিয়া থাকে—সেটা উঠিয়া ডাকিতে লাগিল। গৃহস্থ তখন ভয় পাইল । আশঙ্কায় দ্বার খুলিয়া দেখিতে আইল। দেখিল, আশ্রয়হীন স্ত্রীলোকমাত্র। জিজ্ঞাসা করিল, “কে গা তুমি ?” -
পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬৭
অবয়ব