পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পঞ্চদশ প্রবাহ

 কপাল মন্দ হইলে তাহার ফলাফল ফিরাইতে কাহারও সাধ্য নাই। মুসাল নগরে আসিয়া হাসান কয়েক দিন থাকিলেন। তিনি জাএদার ভয়ে গৃহ পরিত্যাগ করিলেন, কিন্তু অদৃষ্টলিপি যাহা, তাহাই রহিয়া গেল। যখন কপাল টলিয়া যায়, দুঃখ-পথের পথিক হইতে হয়, তখন কিছুতেই আর নিস্তার থাকে না। এক জাএদার ভয়ে গৃহ ত্যাগ করিয়া মুসাল নগরে আসিলেন, কিন্তু সেরূপ কত জাএদা শত্রুতা সাধনের জন্য তাঁহার অপেক্ষা করিতেছিল, তাহা কি তিনি জানিতে পারিয়াছিলেন? এই বিশ্বসংসারে শক্রসংখ্যা যদি আমরা জানিতে পারি, বাহ্যিক আকারে শক্রমিত্র যদি চিনিতে পারি, তবে কি আর বিপদের সম্ভাবনা থাকে? চিনিতে পারিলে কি আর শত্রুরা শত্রুতা সাধন করিতে পারে? তাহা হইলে সতর্কতা কাহার জন্য? এমাম হাসানের ভাগ্যে সুখ নাই। যে দিন জয়নাবকে তিনি বিবাহ করিয়াছেন, যে দিন জয়নাবকে নিজ পুরীমধ্যে আনিয়া জাএদার সহিত রাখিয়াছিলেন, সেই দিনই তাঁহার সুখস্বপ্ন ভাঙ্গিয়া গিয়াছে, সেই দিনই তাঁহার সুখ-সূর্য্য অস্তমিত হইয়াছে। জয়নাবের জন্যই জাএদা আজ তাঁহার পরম শত্রু। সেই শত্রুর যন্ত্রনায় অস্থির হইয়াই আজ তিনি গৃহত্যাগী। সেই গৃহত্যাগেই আর এক শত্রুর শত্রুতা সাধনের সুযোেগ! আবার জয়নাবই জাএদার সুখের কণ্টক। সকলের মূলেই জয়নাব!

 মদিনার সংবাদ দামেস্কে যাইতেছে, দামেস্কের সংবাদ মদিনায় আসিতেছে। এমাম হাসান মদিনা ছাড়িয়া মুসাল নগরে আসিয়াছেন, এ কথাও এজিদের কর্ণে উঠিয়াছে, অপর সাধারণেও শুনিয়াছে। ঐ নগরের একচক্ষু-বিহীন জনৈক বৃদ্ধের, প্রভু মোহাম্মদের প্রতি জাতক্রোধ ছিল। শেষে সেই ক্রোধ, সেই শত্রুতা তাঁহার সন্তানসন্ততি,পরিশেষে হাসান-হোসেনের প্রতি আসিয়াছিল। সেই বৃদ্ধ প্রতিজ্ঞা করিয়াছিল যে, সুযোগ পাইলেই মোহা-