পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উপক্রমণিকা

 একদা প্রভু মোহাম্মদ প্রধান শিষ্যমণ্ডলী মধ্যে উপবেশন করিয়া ধর্ম্মোপদেশ প্রদান করিতেছিলেন, সেই সময়ে স্বর্গীয় প্রধান দূত “জেব্রাইল” আসিয়া তাঁহার নিকট পরম কারুণিক পরমেশ্বরের আদেশবাক্য কহিয় অন্তর্ধান হইলেন। স্বর্গীয় সৌরভে চতুর্দ্দিক আমোদিত হইল। প্রভু মোহাম্মদ ক্ষণকাল ম্লানমুখে নিস্তব্ধ হইয়া রহিলেন। শিষ্যগণ তাহার তাদৃশ অবস্থা দেখিয়া নিতান্ত ভয়াকুল হইলেন। কি কারণে প্রভু এরূপ চিন্তিত হইলেন কেহই তাহা স্থির করিতে না পারিয়া সবিষাদ নয়নে তাহার মুখপানে চাহিয়া রহিলেন। পবিত্র বদনের মলিন ভাব দেখিয়া সকলের নেত্রই বাষ্প-সলিলে পরিপ্লুত হইল। কিন্তু কেহই কিছু জিজ্ঞাসা করিতে সাহসী হইলেন না।

 প্রভু মোহাম্মদ শিষ্যগণের তাদৃশ অবস্থা দর্শনে মনের ভাব গোপন করিতে না পারিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমরা হঠাৎ এরূপ দুঃখিত ও বিষাদিত হইয়া কাদিতেছ কেন?”

 শিষ্যগণ করজোড়ে বলিতে লাগিলেন, “প্রভুর অগোচর কি আছে? ঘনাগমে কিম্বা নিশাশেষে পূর্ণচন্দ্র হঠাৎ মলিন ভাব ধারণ করিলে তারাদলের জ্যোতিঃ তখন কোথায় থাকে? আমরা আপনার চির-আজ্ঞাবহ। অকস্মাৎ প্রভুর পবিত্র মুখের মলিন ভাব দেখিয়াই আমাদের আশঙ্কা জন্মিয়াছে। যতক্ষণ আপনার সহাস্য আস্যের ঈদৃশ বিসদৃশ ভাব বিদ্যমান থাকিবে, ততক্ষণ ততই আমাদের দুঃখবেগ পরিবর্ধিত হইবে। আমরা বেশ বুঝিয়াছি, সামান্য বাতাঘাতে পর্বত কম্পিত হয় নাই। সামান্য বায়ু প্রবাহেও মহাসমুদ্রে প্রবল তরঙ্গ উত্থিত হয় নাই। প্রভো! অনুকম্পা প্রকাশে শীঘ্র ইহার হেতু ব্যক্ত করিয়া অল্পমতি শিষ্যগণকে আশ্বস্ত করুন।”

 প্রভু মোহাম্মদ নম্রভাবে কহিলেন, “তোমাদের মধ্যে কাহারও সন্তান আমার প্রাণাধিক প্রিয়তম হাসান-হোসেনের পরম শত্রু হইবে; হাসানকে বিষপান করাইয়া মারিবে এবং হোসেনকে অস্ত্রাঘাতে নিধন করিবে।”

 এই কথা শুনিয়া শিষ্যগণ নির্ব্বাক হইলেন। কাহারও মুখে একটিও কথা সরিল না। কণ্ঠ, রসনা ক্রমে শুষ্ক হইয়া আসিল। কিছুকাল পরে