পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
১০৬

হইতেছে! অন্তরস্থিত প্রত্যেক শিরা যেন, সহস্র সহস্র খণ্ডে খণ্ডিত হইয়া পড়িতেছে!”

 অতি ত্রস্তে কাসেম পিতৃব্য হোসেনের সহিত পুনরায় সেই গৃহমধ্যে গিয়া উপস্থিত হইলেন। বাড়ীর আর আর সকলে আসিয়া জুটিলেন। সকলের সহিত আসিয়া জাএদাও এক পাশে বসিয়া কাঁদিতে লাগিলেন। হোসেনকে দেখিয়া হাসান অতি কাতরস্বরে বলিতে লাগিলেন, “ভাই, আর নিস্তার নাই। আর সহ্য হয় না। আমার বোধ হইতেছে যে, কে যেন আমার অন্তরমধ্যে বসিয়া আঘাতে বক্ষঃ, উদর এবং শরীরমধ্যস্থ মাংসপেশী, সমস্তই খণ্ড খণ্ড করিয়া কাটিতেছে। ভাই! আমি এইমাত্র মাতামহ, মাতা এবং পিতাকে স্বপ্নে দেখিয়াছি। মাতামহ আমার হস্ত ধরিয়া স্বর্গীয় উদ্যনে বেড়াইতেছেন। মাতামহ ও মাতা আমাকে অনেক সান্ত্বনা দিয়া বলিতেছেন, ‘হাসান! তুমি তুষ্ট হও যে, শীঘ্রই পার্থিব শত্রুদের অত্যাচার হইতে রক্ষা পাইলে। এইরূপ স্বপ্ন দেখিতে দেখিতে হঠাৎ একটি শব্দ আমার কর্ণে প্রবেশ করিল। অমনি নিদ্রাভঙ্গের সহিত স্বপ্নও ভাঙ্গিয়া গেল। অত্যন্ত জলপিপাসা হইয়াছিল, সোরাহীর জল যেমন পান করিয়াছি, মুহূর্ত্ত না যাইতেই আমাকে অস্থির করিয়া তুলিয়াছে। এত বেদনা, এত কষ্ট, আমি কখনই ভোগ করি নাই।”

 হোসেন দুঃখিত এবং কাতরস্বরে বলিতে লাগিলেন আমি সকলই বুঝিয়াছি। আমি আপনার নিকট আর কিছুই চাহি না। আমার এই ভিক্ষা যে, ঐ সোরাহীর জল পান করিতে আমায় অনুমতি করুন। দেখি, জলে কি আছে।” হাসান পীড়িত অবস্থাতেই শশব্যস্তে “ও-কি কর? হোসেন ও-কি কর?”—এই কথা বলিতে বলিতে শয্যা হইতে উঠিলেন,—অনুজের হস্ত হইতে সোরাহী কাড়িয়া লইয়া মাটিতে ফেলিয়া দিলেন। সোরাহী শত খণ্ডে ভাঙ্গিয়া চূর্ণ হইয়া গেল।

 হস্তে ধরিয়া নিজের অনুজকে শয্যার উপর বসাইয়া মুখে বার বার চুম্বন দিয়া হাসান বলিতে লাগিলেন, “ভাই! আমি যে কষ্ট পাইতেছি, তাহা মুখে বলিবার শক্তি নাই। পূর্ব্বের আঘাত, পূর্ব্ব পীড়া, এই উপস্থিত