পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
১১২

তিনি ভাবিতেছেন; আপন কৃতকার্য্যের ফলাফল ভাবিতেছেন; অদৃষ্টফলকে লিখিত লিপির প্রতি নির্ভর করিয়া সমুদয় চিন্তা দূর করিতেছেন। পতির চিরবিচ্ছেদে তাঁহার দুঃখ নাই, ভবিষ্যৎ আশায় এবং জয়নাবের প্রতিহিংসায় কৃতকার্য্য হইয়াও সুখ নাই! অন্তরে শান্তির নামও নাই! সর্ব্বদাই তিনি নিতান্ত অস্থির!

 মায়মুনা ঐ নির্জ্জন স্থানে আসিয়া বলিতে লাগিল, “তিন দিন ত গিয়াছে, আজ আবার কি বলিবে?”

 “আর কি বলিব? এখন সকলই তােমার উপর নির্ভর। আমার আশা, ভরসা, প্রাণ সকলই তোমার হাতে।”

 “কথা কখনই গােপন থাকিবে না। পাড়া-প্রতিবেশীরা এখনই কানাঘুষা আরম্ভ করিয়াছে। যে যাহাকে বলিতেছে, সেই-ই তাহাকে অপরের নিকট বলিতে বারণ করিতেছে। ধরিতে গেলে অনেকেই জানিয়াছে, কেবল মুখে ‘রৈ রৈ হৈ হৈ’ হয় নাই। হোসেন ভ্রাতৃশোকে পাগল, আহার-নিদ্রা পরিত্যাগ করিয়া দিবারাত্র ঈশ্বরের উপাসনায় নিরত; আজ পর্য্যন্ত তােমার সম্বন্ধে কোন কথা কর্ণে প্রবেশ করে নাই। শােকের একটু উপশম হইলেই এ কথা তাহার কর্ণে উঠিবে। এ সাংঘাতিক সংবাদ শুনিতে কি আর তাহার বাকী থাকিবে? তােমার পক্ষ হইয়া কে দুটা কথা বলিবে বল ত?”

 “আমি যে তাহা না ভাবিয়াছি, তাহা নহে; আমার আশা আছে, সন্তোষসুখ ভােগর বাসনা আছে। যাহা করিব, পূর্ব্বেই স্থির করিয়া রাখিয়াছি। এই ত —রাত্রি অধিক হয় নাই, একটু অপেক্ষা কর, এখনই আমি তােমার সঙ্গে যাইতেছি। এই একটি বড় দুঃখ মনে রহিল যে, এখানে থাকিয়া জয়নাবের চির-কান্না শুনিতে পাইলাম না!—তাহার বৈধব্যব্রত দেখিয়া চক্ষের সাধ মিটাইতে পারিলাম না।”

 “খােদা যদি সে দিন দেন, তবে জয়নাবকে হাতে আনা কতক্ষণের কাজ? জয়নাব কি আজ সেই জয়নাব আছে? এখন ত সে পথের ভিখারিণী, যে ইচ্ছা করিবে, সেই-ই তাহাকে হস্তগত করিতে পারিবে। দেখ দেখি, শীঘ্র শীঘ্র সকল কাজ শেষ হইলে কত প্রকার মঙ্গলের আশা! জয়নাবকে পাইতে